এবিএম মূসার আপসহীনতার আদর্শ থেকে তরুণদের শেখার আছে

এবিএম মূসা ও সেতারা মুসার জন্মবার্ষিকীতে আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্ত সাংবাদিক এম এ মালেক বক্তব্য দেন। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ২৮ ফেব্রুয়ারিছবি: সাজিদ হোসেন

বরেণ্য সাংবাদিক এবিএম মূসা ছিলেন দেশের সাংবাদিকদের অভিভাবক। সাংবাদিকতায় তাঁর আপসহীনতার আদর্শ থেকে তরুণদের অনেক কিছু শেখার আছে। আর এ দেশের নারী সাংবাদিকতায় অগ্রণী ছিলেন সেতারা মূসা।

এবিএম মূসার ৯৩তম ও সেতারা মূসার ৮৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘আজীবন সম্মাননা ও স্মারক বক্তৃতা’ অনুষ্ঠানে উঠে এল এসব কথা। আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবিএম মূসা-সেতারা মূসা ফাউন্ডেশন।

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয় সাংবাদিক এম এ মালেককে। ৬১ বছর ধরে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদী পত্রিকা সম্পাদনা করে আসছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সাংবাদিক।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে স্মারক বক্তৃতা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন। তিনি ‘গণমাধ্যমে জেন্ডার পরিসর: নারীর নির্মিতি এবং নারীর অংশগ্রহণ’ শীর্ষক বক্তৃতা তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে দেশের গণমাধ্যমে নারীর উপস্থাপন বিষয়ে তাত্ত্বিক কাঠামোর সন্ধানের বিষয়টি।

আজীবন সম্মাননা পাওয়া সাংবাদিক এম এ মালেকের বক্তব্যে উঠে আসে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সময় মাহবুব উল আলম চৌধুরীর লেখা কবিতা, ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ প্রকাশের ইতিহাস। তিনি বলেন, আদর্শচ্যুত না হয়ে অবিচল থাকা সাংবাদিকের নৈতিকতা। এরই উদাহরণ প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম মূসা। তিনি ছিলেন সাংবাদিকদের অভিভাবক। সাংবাদিকতায় তাঁর আপসহীনতার আদর্শ থেকে এ দেশের বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার আছে।

ফেনীর সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন নাসিম বলেন, এখন কেন একজন এবিএম মূসার জন্ম হয় না, আনিসুজ্জামানের মতো অধ্যাপকের নাম ছড়িয়ে পড়ে না? সংবাদ পণ্যে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান। তিনি বলেন, এবিএম মূসা যেমন বলতেন, তেমনই ছিল তাঁর আপসহীন কলমের ধার।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতার ওপর বক্তব্য দেন সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার প্রশিক্ষক কুর্‌রাতুল-আইন-তাহ্‌মিনা। তিনি বলেন, সংবাদে নারীর উপস্থিতি উপেক্ষিত। তবে সংবাদমাধ্যমের নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা অনুসরণই পারে জেন্ডারভিত্তিক সমতার দিকে এগিয়ে যেতে। সেতারা মূসার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ দেশের নারী সাংবাদিকতায় অগ্রণী ছিলেন সেতারা মূসা।

সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নীর বক্তব্যে উঠে আসে বর্তমানে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নারীকে উপস্থাপনের বিভিন্ন ধরন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও সাংবাদিক নাসিমুন আরা হকের বক্তব্যে গুরুত্ব পায় নারীর বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার দিকটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা।

এবিএম মূসা-সেতারা মূসা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘আজীবন সম্মাননা ও স্মারক বক্তৃতা’ অনুষ্ঠানে অতিথিরা। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ২৮ ফেব্রুয়ারি
ছবি: সাজিদ হোসেন

অনুষ্ঠানের শুরুতে এবিএম মূসা ও সেতারা মূসার জীবনী তুলে ধরা হয়। এবিএম মূসা প্রয়াত হন ২০১৪ সালে। সেতারা মূসা প্রয়াত হয়েছেন ২০২৩ সালে। তবে দুজনেরই জন্মদিন ২৮ ফেব্রুয়ারি।

প্রয়াত সাংবাদিক এবিএম মূসা ৬৪ বছর ধরে সাংবাদিকতা জগতে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। একুশে পদকে ভূষিত এবিএম মূসা ডেইলি অবজারভার, দৈনিক সংবাদ, বিবিসি, সানডে টাইমস, বিটিভি, যুগান্তরসহ অনেক গণমাধ্যমে দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটেও।

সেতারা মূসা ছিলেন সাংবাদিক ও সমাজসেবী। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর বিয়ে হয় এবিএম মূসার সঙ্গে। দৈনিক পূর্বদেশে নারীপাতা সম্পাদনার পাশাপাশি দৈনিক জনতার নারী পাতাসহ আরও অনেক গণমাধ্যমে কাজ করেছেন সেতারা মূসা।

এবিএম মূসা ও সেতারা মূসার তিন মেয়ে মরিয়ম মুসা, পারভিন সুলতানা ও শারমিন মুসা পারিবারিকভাবে মা–বাবার স্মরণে প্রতিষ্ঠা করেন এবিএম মূসা-সেতারা মূসা ফাউন্ডেশন।

২০১৭ সাল থেকে আজীবন সম্মাননা দিয়ে আসছে এই ফাউন্ডেশন। সাংবাদিক তোয়াব খান, কামাল লোহানী এবং আলোকচিত্রী সাইদা খানমের মতো গুণীজনেরা এই সম্মাননা পেয়েছেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শামীম রেজা, সাংবাদিক ডেইজি মওদুদসহ অনেকে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস।