জগন্নাথে দিনভর শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচি

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে বুধবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেনছবি: আশিকুজ্জামান

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় বুধবার দিনভর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানা কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাঁদের কর্মসূচির মধ্যে ছিল গায়েবানা জানাজা, প্রশাসনিক ভবন ও সড়কে অবস্থান, প্রশাসনের কাছে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধসহ বিভিন্ন দাবি জানানো।

এর মধ্যে সন্ধ্যায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও অন্য শিক্ষকদের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে যান।

শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে ছিল ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ছাত্রী হল খোলা রাখা, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহন করা, ছাত্রলীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলকে সহযোগিতা না করা, মেসে থাকা ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আইনুল ইসলাম এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, প্রশাসন সব দাবি বিবেচনায় নিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কঠিন মুহূর্তের মধ্যেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আমরা ধৈর্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো জানার ও সমাধান করার ব্যবস্থা করছি। তারা আমাদের প্রতি আশ্বস্ত। আশা করি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

ছাত্রলীগ প্রবেশ নিষেধের ‘নোটিশ’

‘ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ প্রবেশ নিষেধ’ পোস্টারটি সাঁটানো হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে। বুধবার বিকেলে এটি সাঁটান কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা
ছবি: আশিকুজ্জামান

‘ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ প্রবেশ নিষেধ’ এমন একটি পোস্টার সাঁটানো হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে। বুধবার বিকেলে ‘নোটিশ’ আকারে এটি সাঁটিয়ে দেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা।

ছাত্রলীগ প্রবেশে মানা করার নোটিশটির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এটি ছাত্রলীগের সাবেক-বর্তমান নেতা-কর্মীদেরও শেয়ার করে আলোচনা-সমালোচনা করতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফটকের একটি পাল্লায় পরপর তিনটি পোস্টার। প্রথমটিতে বাংলাদেশের মানচিত্রের সামনে ফাঁসির মঞ্চ। আর নিচে লেখা ‘ফাঁসির মঞ্চে ঝুলছে কে/গণতন্ত্র’। এরপর দ্বিতীয় পোস্টারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ প্রবেশে মানা করার সেই পোস্টার। যেখানে লেখা, ‘জরুরি নোটিশ/ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ প্রবেশ নিষেধ। আদেশক্রমে, সাধারণ শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।’ শেষ পোস্টারে রক্তমাখা জাতীয় পতাকার একটি ছবি।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, পুলিশ-ছাত্রলীগের যৌথ হামলা ও গুলিবর্ষণে শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন। যারা শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে থাকে না, তাদের ক্যাম্পাসে প্রয়োজন নেই। যদি কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থী বা কর্মচারী ছাত্রলীগকে কোনো প্রকার সহযোগিতা করেন, তবে তাঁদেরও আন্দোলনকারীরা বর্জন করবেন।

সন্ধ্যার পরে আন্দোলনকারীরা চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা পোস্টারগুলো ছিড়ে ফেলেন। পরে সেগুলো তাঁরা পুড়িয়ে দেন।