বাংলা একাডেমির পুরস্কার ও ফেলোশিপ পেলেন যাঁরা
বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, বিভিন্ন সময় একাডেমিকে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে, কখনো কখনো নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় নীতির প্রতি নমনীয় হতে হয়েছে। তবে একাডেমি সাত দশক ধরে এর মধ্য দিয়েই দায়িত্ব পালন করে চলেছে।
আজ শনিবার বাংলা একাডেমির সাধারণ পরিষদের ৪৭তম বার্ষিক সভায় তিনি এ কথাগুলো বলেন। আজকের অনুষ্ঠানে সাম্মানিক ফেলোশিপ এবং একাডেমির ছয়টি পুরস্কার দেওয়া হয়।
সকাল ৯টায় রাজধানীতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর ছিল পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ। গত এক বছরে যেসব গুণী ব্যক্তি প্রয়াত হয়েছেন, তাঁদের স্মরণে শোকপ্রস্তাব পাঠ ও তাঁদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শুরু হয় সভার কার্যক্রম।
সভায় দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর সাতজনকে বাংলা একাডেমি সাম্মানিক ফেলোশিপ দেওয়া হয়। ফেলোশিপপ্রাপ্তরা হলেন মঈদুল হাসান (মুক্তিযুদ্ধ), রিচার্ড এম ইটন (ইতিহাস), অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার (চিকিৎসাবিজ্ঞান), ড. ফেরদৌসী কাদরী (বিজ্ঞান), সুগত চাকমা (ভাষা গবেষণা), শহিদুল আলম (শিল্পকলা) ও শম্ভু আচার্য (শিল্পকলা)।
পাশাপাশি বাংলা একাডেমি পরিচালিত ছয়টি পুরস্কারও দেওয়া হয়। এর মধ্যে ‘সা’দত আলি আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’ দেওয়া হয় সদ্য প্রয়াত অনুবাদক ও গবেষক মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদকে। প্রাবন্ধিক ও গবেষক ড. ওয়াকিল আহমদ পেয়েছেন ‘সাহিত্যিক মোহম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধসাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’, শিশুসাহিত্যিক আবু সালেহ পেয়েছেন ‘কবীর চৌধুরী শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’, নাট্যজন নায়লা আজাদ পেয়েছেন ‘অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ নাট্যজন পুরস্কার ২০২৪’, কথাসাহিত্যিক নাসিমা আনিস পেয়েছেন ‘আবু রুশদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’, কথাসাহিত্যিক সুশান্ত মজুমদার পেয়েছেন (সামগ্রিক অবদানের জন্য) ‘রাবেয়া খাতুন কথাসাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’ এবং কথাসাহিত্যিক সুমন মজুমদার অনূর্ধ্ব ৪৯ বছর বয়সী লেখকদের মধ্যে ২০২৩ সালে প্রকাশিত ‘রাইমঙ্গল’ উপন্যাসের জন্য ‘রাবেয়া খাতুন কথাসাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’–এ ভূষিত হয়েছেন।
পুরস্কার ও ফেলোশিপপ্রাপ্ত গুণীজনদের হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্য, সম্মাননাপত্র, সম্মাননা—স্মারক ও ফুলের তোড়া তুলে দেন একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক এবং মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
সভায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট তুলে ধরেন একাডেমির সচিব মোহা. নায়েব আলী।
মোহাম্মদ আজম বলেন, যে ঐতিহাসিক জনচাহিদায় বাংলা একাডেমির উদ্ভব হয়েছিল, প্রায় সাত দশকের ধারাবাহিকতায় একাডেমি সে চাহিদা অনেক ক্ষেত্রে পূরণ করেছে। অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং কর্তৃত্বের কারণে সাময়িকভাবে হয়তো একাডেমির প্রত্যাশিত পথচলা বিপন্ন হয়েছে। বাংলা একাডেমির পুরোনো ঐতিহ্য রক্ষায় গবেষণাবৃত্তি চালুসহ বিভিন্ন নতুন নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান তিনি। প্রকাশনার ক্ষেত্রে সংখ্যাগত বৃদ্ধির চেয়ে গুণগত মান নিশ্চিত করার দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আজকের বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, একাডেমিকে ঘিরে দেশের মানুষের যে বিপুল প্রত্যাশা, সবার সহযোগিতায় আমরা তা পূরণে সক্ষম হব।’ এই আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শেষ হয় বার্ষিক সভা।