কল্পনা চাকমাকে ২৮ বছরেও রাষ্ট্র খুঁজে বের করতে পারল না

কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের প্রতিবাদে এবং এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিল হয়। আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র-যুব ও নারী সংগঠনগুলোর এর আয়োজন করেছবি: আশরাফুল আলম

রাঙামাটি থেকে ১৯৯৬ সালে অপহরণের শিকার হওয়া কল্পনা চাকমা এখন কোথায় আছেন, এই প্রশ্নের জবাব চাওয়া হয়েছে রাজধানীর শাহবাগের এক সমাবেশ থেকে। সমাবেশে বক্তারা বলেন, কল্পনা চাকমাকে ২৮ বছরেও রাষ্ট্র খুঁজে বের করতে পারল না। তবে কল্পনা চাকমা বেঁচে থাকবেন রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের স্মারকচিহ্ন হিসেবে৷ বাংলাদেশ রাষ্ট্র আসলে কল্পনা চাকমার অপহরণের বিচার করতেই চায়নি৷

আজ বুধবার বিকেলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র-যুব ও নারী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই সমাবেশ হয়। নিম্ন আদালতে কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের প্রতিবাদে এবং এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে এই সমাবেশ ডাকা হয়৷

১৯৯৬ সালের ১১ জুন মধ্যরাতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার লাইল্যাঘোনায় নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমা। পরদিন কল্পনার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা বাদী হয়ে বাঘাইছড়ি থানায় অপহরণের মামলা করেন। তবে ঘটনার তথ্য–প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গত ২৩ এপ্রিল গ্রহণ করেন রাঙামাটির আদালত। ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করে আদালত মামলাটি অবসানের নির্দেশ দেন। এর মাধ্যমে ২৮ বছর চলার পর মামলাটির সমাপ্তি ঘটে।

শাহবাগের সমাবেশে অংশ নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, রাষ্ট্র বলছে, (কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনায়) কিছুই পেলাম না। পরিবারের সদস্যরা টর্চের আলোয় অপহরণকারীদের দেখেছে। রাষ্ট্র একে ধামাচাপা দিয়েছে। কল্পনা চাকমা এখন কোথায়, এর জবাব সরকারকে দিতে হবে।

ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘বিষয়টাকে ধামাচাপা দিতে অনেক কিছু ব্যবহার করা হয়েছিল। তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হলো, মামলা খারিজ করা হলো৷ কিন্তু এতে আমরা ক্ষান্ত হব না৷ উচ্চ আদালতে যাওয়া হচ্ছে, হবে৷ বিচারের জন্য লড়াই-সংগ্রাম চলবে৷ সরকার কল্পনাকে ভয় পেয়েছে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

বাসদের সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্র কত কিছু খুঁজে বের করতে পারে; কিন্তু ২৮ বছরেও কল্পনা চাকমাকে খুঁজে বের করতে পারল না! এই রাষ্ট্রের কাছে দাবি করে আসলে লাভ হবে না, তাকে এর জন্য দায়ী করতে হবে৷ কল্পনা চাকমা বেঁচে থাকবেন রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের স্মারকচিহ্ন হিসেবে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র কল্পনার অপহরণের বিচার করতে চায়নি। এই বিচার না করে রাষ্ট্র অন্যায় করেছে৷

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী উলিসিং মারমা সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।  সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নেতা সালেহ আহমেদ, যুব ইউনিয়ন নেতা খান আসাদুজ্জামান, আদিবাসী ফোরামের নেতা গজেন্দ্র নাথ মাহাতো, সাংবাদিক নজরুল কবীর, আদিবাসী ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলিক মৃ, ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সাবেক সভাপতি দীপক শীল, বর্তমান সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি অতুলন দাশ, মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক অংশৈসিং মারমা প্রমুখ বক্তব্য দেন৷ সমাবেশের পর শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।