২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

শূন্য থেকে আবার সব শুরু করতে হবে ফাতেমার

বনানী গোড়াউন বস্তিতে ফাতেমা আক্তার। আজ ২৬ মার্চছবি: প্রথম আলো

উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় থেকেই নিজের পড়াশোনা ও ভরণপোষণের দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নেন ফাতেমা আক্তার। বাসায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের কিছু শিক্ষার্থীকে পড়িয়ে (টিউশনি) তাঁর আয় হতো। স্নাতকে ভর্তির পর নিজের জমানো টাকায় কিনেছিলেন সেলাই মেশিন। তার আগে পরিচিত একজনের কাছ থেকে নারীদের জামা সেলাইয়ের কাজ শিখেছিলেন।

শিক্ষার্থী পড়ানোর পাশাপাশি টুকটাক জামা সেলাই করে যা আসত, সেটা দিয়েই চলত নিজের পড়াশোনা ও খাবারদাবারের খরচ। কিন্তু গত রোববার আগুনে তাঁর থাকার কক্ষসহ ভেতরের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে বস্তির আড়াই শতাধিক ঘর (কক্ষ) পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২০০ পরিবার।

রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তির পাশে বনানীর গোডাউন বস্তির বাসিন্দা ফাতেমা আক্তার ইডেন মহিলা কলেজের ইসলামিক শিক্ষা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। গত রোববার সন্ধ্যায় আগুনে ফাতেমার কক্ষসহ ভেতরে থাকা তাঁর বইপত্র, বিছানা, কাপড়চোপড়, আসবাব, কিছু ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ সবকিছু পুড়ে গেছে। পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি ও কাপড় সেলাইয়ের কাজ করে নিজের খরচ বাদে জমানো টাকায় এসব কিনেছিলেন ফাতেমা।

আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে আগুনে পুড়ে যাওয়া কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় ফাতেমার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কত কষ্ট করে অল্প অল্প টাকা জমিয়ে এগুলো কিনেছিলাম। আমার পড়ার বইপত্রসহ ঘরের সব জিনিস পুড়ে গেছে। কিছুই অক্ষত নেই। আবার আমাকে সবকিছু শূন্য থেকে সব শুরু করতে হবে।’

ফাতেমা বলেন, ঘরেই পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সাত শিক্ষার্থীকে তিনি পড়ান। শিক্ষার্থীরা সবাই এই বস্তিরই। টিউশনি থেকে মাসে ৯ হাজার টাকা আয় হয়। মাঝেমধ্যে পরিচিতরা কাপড় সেলাই করতে দেন। সেখান থেকে আরও হাজার খানেক টাকা আসে। এই আয় দিয়েই তাঁর পড়াশোনাসহ যাবতীয় খরচ চলে। পরিবার থেকে কোনো টাকা নেন না। তবে যে কক্ষে তিনি থাকেন, সেটি তাঁর ভাইয়ের বানিয়ে দেওয়া। ভাড়া দিতে হয় না।

আগুনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফাতেমা বলেন, ‘ঘটনার দিনও আমি পড়াচ্ছিলাম। দেখি কাছেই একটি ঘরে আগুন লেগেছে। আগুন দেখে দ্রুত আমার ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। সঙ্গে শুধু সনদগুলো নিতে পেরেছি।’

শিক্ষাসনদ সঙ্গে নেওয়া প্রসঙ্গে ফাতেমা বলেন, ‘চার বছর আগে করোনার সময়ও এই বস্তিতে আগুন লেগেছিল। তখন অবশ্য আমার সনদও ওঠানো ছিল না, তাই বেঁচে গিয়েছিল। তবে সেবার আমার বইপত্র পুড়ে যায়। ওই আগুনে বস্তির অনেকের সনদ পুড়ে গিয়েছিল। ওইটা মাথায় রয়ে গেছে। তাই সনদ সব সময় হাতের নাগালে গুছিয়ে রাখি।’

আগুনের ঘটনায় খাদ্য ও অন্যান্য ত্রাণসহায়তার বিষয়ে ফাতেমা বলেন, স্থানীয় দুই কাউন্সিলর (১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মফিজুর রহমান, ২০ নম্বরের মো. নাছির) সাহ্‌রি ও ইফতারির সময়ে খাবার দিচ্ছেন। এর বাইরে ব্র্যাক থেকে হাঁড়ি-পাতিল, গামলা-বালতিসহ সংসারের প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী দিয়েছে। আজ সকালে এক পোশাক কারখানার মালিক চাল, ডাল ও চিড়া দিয়েছেন।

বনানীর গোডাউন বস্তি এলাকায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্যারা কাউন্সিলর (পিসি) হিসেবে কাজ করেন রেকসানা পারভীন। তিনি আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, বস্তিতে ১৯৮টি পরিবারকে প্রাথমিক ত্রাণসহায়তা দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের এই হিসাব খানাভিত্তিক। অর্থাৎ এক রান্নার খাবার যারা একসঙ্গে খায়। তবে কক্ষের হিসাব করলে আড়াই শতাধিক পরিবার হবে বলেও জানান তিনি।