ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় আজ শেষ হচ্ছে জয়নুল উৎসব
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১১০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী জয়নুল উৎসব শেষ হচ্ছে আজ রোববার। আজ সকালে বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলার পথিকৃৎ জয়নুল আবেদিনের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসবের শেষ দিনের কর্মসূচি। এরপর চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে গাননাচ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান ও আলোচনা পর্ব।
এ বছর ‘জয়নুল সম্মাননা ২০২৪’ পেলেন শিল্পী অধ্যাপক মিজানুর রহিম ও শিল্পী অধ্যাপক রফিকুল আলম। দুই গুণীজনের ক্রেস্ট মানপত্র তুলে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান।
সমাপনী দিনের সকালের এ আয়োজনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, জয়নুল আবেদিনের শিল্পকলার সঙ্গে পরিচিত না হয়ে বাঙালি হিসেবে গড়ে ওঠা যায় না। তাঁর আঁকা ছবিতে জীবনের সব মাত্রার স্পর্শ পাওয়া যায়। জয়নুল উৎসব আমাদের জীবনেরই উদ্যাপন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে সবার একসঙ্গে থাকার প্রয়োজন আরও স্পষ্ট হচ্ছে। ঐক্য ধরে রাখতে এমন আয়োজন অনেক বেশি জরুরি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য সায়মা হক বলেন, সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারা আয়োজনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জয়নুল উৎসব তাই করতে পেরেছে। তিনি বলেন, শিল্পাচার্যের কাজ সব সময় বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
শিল্পী মিজানুর রহিম তাঁর বক্তব্যে গত শতকের ষাটের দশকে চারুকলায় ভর্তি হওয়া ও চাচা জয়নুল আবেদিনের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার স্মৃতিকথা উল্লেখ করেন। অসুস্থ থাকায় শিল্পী রফিকুল আলমের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী সুফিয়া আক্তার। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ছেলে প্রকৌশলী মইনুল আবেদীন বলেন, ‘মন খারাপ হলেই চারুকলা অনুষদে আসি। সময় কাটাই। এই চারুকলা থেকে আমরা যেন কখনো বিচ্ছিন্ন ছিলাম না।’
অনুষ্ঠানে মঞ্চে থাকা অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন চারুকলার ডিন মো. আজহারুল ইসলাম শেখ। তিনি বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সারা বিশ্ব ঘুরে দেখে জেনেছিলেন, শিল্পকলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা লোকশিল্প। তাই এখানে গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
রোববার সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তিন দিনের জয়নুল উৎসব। উৎসব শুরু হয়েছিল ২৭ ডিসেম্বর সকাল থেকে। শুক্রবার সকালে চারুকলা অনুষদের মাঠে মেলার উদ্বোধনের পর অতিথিরা শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং, ভাস্কর্য, গ্রাফিক ডিজাইন, প্রিন্টমেকিং, ওরিয়েন্টাল আর্ট, সিরামিকসহ সব বিভাগের শিক্ষকদের আঁকা ছবি ও কাজ।
প্রতিবারের মতো এবারও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিল্পীরা জয়নুল উৎসবে যোগ দিয়েছেন। মেলায় পটচিত্র থেকে বায়োস্কোপ, মৃৎশিল্প থেকে বেতের কাজ, সেলাই কর্ম থেকে ধাতবশিল্পের জিনিসপত্র নিয়ে বসেছে পসরা। চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরাও নিজেদের হাতের কাজ নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছেন।