হাসপাতালের ওষুধের দোকানও ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার যৌক্তিকতা দেখছেন না মেয়র তাপস
ঢাকা শহরকে একটি সুনির্দিষ্ট সময়সূচির মধ্যে আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস হাসপাতালের সঙ্গে থাকা ওষুধের দোকানগুলোও ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার যৌক্তিকতা দেখছেন না। যদিও তাঁর এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে কেউ কেউ বলেছেন, মানুষের অসুস্থতা কখন হবে, সে সময়ও বেঁধে দিতে চায় সরকার।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র তাপস কেন এ কথা বলছেন, তার একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘হাসপাতালে সংযুক্ত ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার যৌক্তিকতা আমরা দেখি না। কারণ, যেখানে রোববার থেকে বৃহস্পতিবারে সুনির্দিষ্ট সময়ের পর, শুক্র-শনিবার এবং রাতের বেলা চিকিৎসকই পাওয়া যায় না, সেখানে ওষুধের দোকান কেন খোলা রাখা হবে? আগে তো চিকিৎসক নিশ্চিত করতে হবে। তারপরই তো চিকিৎসাসেবার জন্য ওষুধের দোকান খোলা রাখতে হবে।’ তবে এরপরও কোনো হাসপাতাল লিখিত আবেদন নিয়ে গেলে এবং সেখানে যৌক্তিক কারণ তুলে ধরতে পারলে, এ বিষয়ে বিবেচনা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে গুলিস্তানে নগর ভবনের মেয়র হানিফ অডিটরিয়ামে করপোরেশনের দ্বিতীয় পরিষদের ষোড়শ সভার সূচনা বক্তব্যে এ বিষয়ে কথা বলেন শেখ ফজলে নূর তাপস। সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান কতক্ষণ খোলা রাখা যাবে, তা নির্ধারণ করে দিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। একেক ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য একেক রকম সময়সীমা নির্ধারণ করেছে তারা। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ সময়সীমা কার্যকর হবে। সূচি অনুযায়ী, সব দোকানপাট, শপিং মল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজর, ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রাত আটটা পর্যন্ত খোলা রাখে যাবে। খাবারের দোকান বা রেস্তোরাঁর রান্নাঘর বন্ধ করতে হবে রাত ১০টার মধ্যে। আর খাবার সরবরাহ চলবে রাত ১১টা পর্যন্ত।
সিনেমা হলসহ বিনোদনমূলক প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা বন্ধ হবে রাত ১১টার মধ্যে। সাধারণ ওষুধের দোকান বন্ধ হয়ে যাবে রাত ১২টার মধ্যে। আর হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত নিজস্ব ওষুধের দোকান বন্ধ করতে হবে রাত দুইটার মধ্যে।
সভায় বক্তব্যে মেয়র তাপস দাবি করেছেন, তাঁদের গণবিজ্ঞপ্তির সময়সূচি ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। শুধু হাসপাতালসংশ্লিষ্ট ওষুধের দোকানগুলো খোলা রাখার বিষয়ে বিভিন্নভাবে বলা হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অংশীজন যাঁরা আছেন, তাঁরা এখনো এ বিষয়ে লিখিত আবেদন করেননি।
মেয়র বলেন, নির্ধারিত সময়ের বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করতে হবে। সেখানে তাদের প্রতিষ্ঠান বা কার্যক্রম কেন অত্যাবশ্যক, তার পক্ষে যথাযথ যুক্তি দেখাতে হবে। পরে তা বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা কার্যক্রমকে বর্ধিত সময় দেওয়া হবে।
ঘোষিত সময়সূচি বাস্তবায়নে কাউন্সিলরদের নির্দেশনা দিয়ে মেয়র তাপস বলেন, ‘আপনারা অবশ্যই এই সময়সূচি নিশ্চিত করবেন। এলাকা, পাড়া-মহল্লায় যাতে সবাই সূচি মেনে যেন কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করে, সেটি নিশ্চিত করবেন। এর ব্যত্যয় হলে আমরা আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
সময়সূচির সঙ্গে করপোরেশনের আনুষঙ্গিক কার্যক্রম ও শহরের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে দাবি করেন যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করে আসা শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, ‘শুধু অবকাঠামো উন্নয়নেই একটি শহরকে পরিচালনা করা যায় না। তার সাথে সাথে আনুষঙ্গিক যত বিষয় রয়েছে, সেগুলোরও সংযোগ রয়েছে।
সুনির্দিষ্ট সময়সূচির সাথে আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা জড়িত। যখন সবকিছু একটি সূচির আওতায় আসবে, তখন আমরা কার্যক্রমগুলো আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারব। ঢাকাবাসীকে ফলপ্রসূ ও কার্যকর সেবা প্রদানের পাশাপাশি একটি উন্নত ঢাকা উপহার দিতে পারব।’
সিটি করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ স্বাগত বক্তব্য দেন। এ ছাড়া কাউন্সিলররা বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।