শিশুটিকে রিকশাচালকের কাছে দিয়ে কোথায় গেলেন নারী যাত্রী
শিশুটির বয়স দুই বছরের কাছাকাছি হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ সদস্যরা শিশুটির জন্য সাদা–কালো চেকের নতুন শার্ট–প্যান্ট আর জুতা কিনে দিয়েছেন। থানায় সবার সঙ্গে তেমন ভাব না হলেও সকাল থেকে শিশুটি পুলিশ কনস্টেবল রানী খাতুনের কাছ ছাড়া হতে চাইছে না। অন্য কেউ কোলে নিতে চাইলেই রানী খাতুনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। রানী খাতুনও শিশুটিকে মায়ের মমতায় আগলে রাখছেন। তাঁরও প্রায় একই বয়সী একটি মেয়ে আছে।
৯৯৯–এ ফোন পেয়ে গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে শিশুটিকে থানায় আনা হয়েছে। রাতে সে নারী পুলিশ কনস্টেবলদের কাছে ঘুমিয়েছে। সকালে তাকে গোসল করানো হয়েছে। মাছ ও সবজি দিয়ে ভাত খেয়েছে সে।
আজ শনিবার দুপুরে থানায় গিয়ে দেখা গেল, শিশুটির ঠান্ডা লেগেছে। কান্নাকাটি তেমন একটা করে না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ডাকলে তেমন একটা সাড়া দেয় না। তবে মা কোথায় জানতে চাইলে চোখ তুলে তাকায়। আঙুল দিয়ে দূরে দেখিয়ে বলে ওই যে। কথা বলার মধ্যে এটুকুই স্পষ্ট।
রানী খাতুন বললেন, ‘আমি নিজেও এ বয়সী এক মেয়ের মা। বাসায় আমার মেয়েটারও ঠান্ডা লেগেছে। শিশুটি তার মাকে খুঁজছে তা বুঝতে পারছি। মায়ের কথা জানতে চাইলে একটু সাড়া দেয়। অস্পষ্টভাবে কিছু একটা বলতে চায়। আজ জামা–জুতা কেনার জন্য ওকে বাইরে নিয়ে গেলে গাড়ি দেখে একটু খুশি হয়ে হেসেছিল। এমনিতে বেশ গম্ভীর থাকে। শরীরের এক জায়গায় একটু ক্ষতের মতো আছে। এ ছাড়া শিশুটি সুস্থ আছে।’
শেরেবাংলা নগর থানার এসআই ফাহাদ হোসেন এক রিকশাচালকের বরাত দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, গতকাল রাত আটটার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে এক নারী শিশুটিকে নিয়ে রিকশায় ছিলেন। হুট করে ওই নারী কাজের কথা বলে রিকশা থামাতে বলে শিশুটিকে রিকশাচালককে একটু ধরতে বলেন। রিকশাচালক শিশুটিকে কোলে নেন। এরপর আর ওই নারীর কোনো পাত্তা নেই দেখে রিকশাচালক হাসপাতালের আনসার সদস্যদের জানান। আনসার সদস্যরা আশপাশে ওই নারীর খোঁজ করতে থাকেন। এরপর তাঁরা পুলিশের জাতীয় সহায়তা নম্বর ৯৯৯–এর মাধ্যমে শেরেবাংলা নগর থানায় ঘটনাটি জানান।
ফাহাদ হোসেন জানালেন, শিশুটিকে পাওয়ার পর শিশুটি সুস্থ কি না, তা জানার জন্য শ্যামলীতে বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, শিশুটি সুস্থ আছে। পরে তাকে থানায় আনা হয়। রিকশাচালক কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। তাঁর স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা রেখে তাঁকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
শেরেবাংলা নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) উৎপল বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারীকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি শিশুটিকে কেন ফেলে গেলেন বা রিকশাচালক সত্য কথা বলছেন কি না, তা জানার কোনো উপায় নেই। শিশুটির ছবি সব থানায় পাঠানো হয়েছে। রিকশাচালক যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে বলছে, সে জায়গার আশপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে কি না, তার খোঁজ করা হচ্ছে।
উৎপল বড়ুয়া বলেন, এমন হতে পারে ওই নারী শিশুটিকে চুরি করে পালাতে চেয়েছিলেন, পরে ধরা পড়ার ভয়ে রিকশাচালকের কাছে দিয়ে চলে গেছেন, নয়তো পারিবারিক কলহ বা কোনো কারণে শিশুটিকে পালতে না পেরে শিশুটির মা নিজেই হয়তো শিশুটিকে ফেলে চলে গেছেন।
উৎপল বড়ুয়ার মতে, দিন দিন পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন আলগা হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে এভাবেও শিশুসন্তানকে ফেলে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি জানালেন, শিশুটিকে আজ থানায় রাখা হবে। আজকের মধ্যে ওই নারীর সন্ধান পাওয়া না গেলে আদালতের মাধ্যমে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ছোটমণি নিবাসে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
থানায় পুলিশ সদস্যরা কাজের ফাঁকে এসে শিশুটির ছবি তুলছেন। আদর করছেন। আক্ষেপ করে বলছেন, মানুষ কীভাবে এমন কাজ করতে পারে?