শয্যা খালি হতে না হতেই ‘আরেক রোগী আসছে’

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু ফারদিনকে নেবুলাইজ করাচ্ছেন মা সাথী বেগম।‌ বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল, ঢাকাছবি: জহির রায়হান

চার মাস চার দিন বয়সী ছেলে ফারদিন ইসলামকে নিয়ে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের নার্সদের কক্ষে বসে ছিলেন গাজীপুরের টঙ্গীর বাসিন্দা সাথী বেগম। ১৫–২০ মিনিট পরপর ছেলে ফারদিনকে নেবুলাইজ করাচ্ছিলেন তিনি। ঠান্ডার কারণে গত শুক্রবার ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন।

সাথী বেগম বলেন, বাচ্চা জন্মগতভাবে ঠান্ডা পেয়েছে। ঠান্ডা আর কমে না। চিকিৎসক বলেছেন, বাচ্চার নিউমোনিয়া হয়েছে।

সাথী বেগমের মতো অনেকেই শিশুর ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে শিশু হাসপাতালে ভিড় করছেন। এবার রাজধানীসহ সারা দেশে জেঁকে বসেছে কনকনে শীত। অতিরিক্ত শীতে শিশুদের অসুস্থতার হার বেশি। শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত অসুখ নিয়ে হাসপাতালগুলোয় ভিড় বাড়ে অভিভাবকদের।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটেও শীতজনিত রোগ নিয়ে শিশুরা ভর্তি হচ্ছে। আজ রোববার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নিউমোনিয়া ওয়ার্ডের ১৬টি শয্যার সব কটিই পূর্ণ। এর বাইরে ৩টি শিশু আছে কেবিনে। এ ছাড়া ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডেও বেশির ভাগ শিশু নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছে। এদের অনেককে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। রাজধানীর শিশু ছাড়া আশপাশের জেলাগুলো থেকেও রোগী আসছে এখানে।

শিশু হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ নার্স রিক্তা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, একটি শয্যা খালি হতে না হতেই আরেক শিশু রোগী আসছে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে গত ১০ দিনে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে প্রায় ৩০০ শিশু। এর মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ২০৫।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২০টি শিশু ভর্তি হয়েছে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ২২টি শিশু। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ঠান্ডাজনিত রোগ, অ্যাজমা ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১৪০টি শিশু চিকিৎসা নিয়েছে।

শিশু হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সামনে কাঁদছিলেন সেলিনা আক্তার। তাঁর বাড়ি জামালপুরে। তিনি বলেন, তাঁর ১১ বছরের ছেলে সামিন ইয়াসির অটিজমে আক্রান্ত। ছেলের চিকিৎসার জন্য গত ৫ ডিসেম্বর তাঁরা ভারতের বেঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন। এ সময় তাঁরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস ও ট্রেনে যাতায়াত করেন। ১১ তারিখ রাতে ঢাকায় ফিরলে সামিন মারাত্মক ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়। চিকিৎসক বলেছেন, ঠান্ডা থেকে তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। সামিনকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে।

চাঁদপুরে আসবাব তৈরির কাজ করা আবু তাহেরের ৪৬ দিন বয়সী ছেলে আরিয়ানও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। গতকাল শনিবার আরিয়ানকে ঢাকায় নিয়ে এসে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

কক্সবাজারের কলাতলীর বাসিন্দা আফরোজা সুলতানার দেড় বছর বয়সী ছেলে আতিকুল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল, ঢাকা
ছবি: প্রথম আলো

আবু তাহের বলেন, তিন-চার দিন থেকে ছেলের ঠান্ডা-কাশি। খুব ভয় লাগছে।

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও সহকারী অধ্যাপক ফারহানা আহমেদের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শীত বেড়ে গেলে অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ ঠান্ডাজনিত রোগ বেড়ে যায়। হাসপাতালে শিশু রোগী বাড়ছে।

শীত থেকে শিশুদের বাঁচাতে পরিবারের সচেতনতার কথা বলেন ফারহানা আহমেদ। তাঁর মতে, এ সময় শিশুকে সূর্য ডোবার আগে ও পরে ঘর যথাসম্ভব গরম রাখতে হবে। শিশুকে কোনোভাবে ঠান্ডা লাগানো যাবে না।

একই চিত্র দেখা গেছে শিশু হাসপাতালের কাছাকাছি অবস্থিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও। সেখানে ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে অনেক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মুনিরা বেগমের ৩ মাস ১৫ দিন বয়সী ছেলের নিউমোনিয়া হয়েছে। তাই ছেলেকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

মুনিরা প্রথম আলোকে বলেন, আগে ঠান্ডা ছিল। এর মধ্যে শীত বেড়েছে। ছোট ছেলে–মেয়ে নিয়ে মা–বাবারা দুশ্চিন্তায় আছেন।