সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় ধারণ করা ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
সেখানে দেখা গেছে, একটি প্রাইভেট কার রাস্তার মোড় ঘুরেই একটি রিকশাকে বেপরোয়া গতিতে চাপা দেয়। গাড়িটির গতি এতই বেশি ছিল যে রিকশাটিকে রাস্তার এক পাশ থেকে অন্য পাশে নিয়ে যায়। রিকশাচালক ও যাত্রীরা গাড়ির নিচে চাপা পড়েন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রোববার রাত আটটার দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে ঘটনাটি ঘটেছে। এতে রিকশাচালক হাবিবুর রহমান (৪৫), যাত্রী আফরোজা আহমেদ (৩৪) ও তাঁর স্বামী ইমরান রেজা (৩৮) গুরুতর আহত হন। আফরোজা ও ইমরানের তিন বছর বয়সী মেয়ে এনায়া রেজাও (৩) আহত হয়।
আফরোজা আহমেদের মেরুদণ্ডের হাড়, বাঁ পায়ের গোড়ালির হাড় ভেঙে গেছে ও কপাল ফেটে গেছে।
রিকশাচালক হাবিবুর রহমানের মাথা ফেটেছে। ডান হাতসহ শরীরের কয়েকটি জায়গার হাড় ভেঙেছে। তিনি এখন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি।
রিকশার যাত্রী ইমরান ও আফরোজা রাজধানীর দুটি হাসপাতালে ভর্তি। ইমরানের বাঁ হাতের বাহুর চামড়া উঠে গিয়ে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে।
আফরোজার বোন আফসানা আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, আফরোজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। তাঁর স্বামী ইমরান পেশায় প্রকৌশলী। তাঁদের সাত বছর ও তিন বছর বয়সী দুটি সন্তান রয়েছে।
স্বজনেরা জানান, ইমরান ও আফরোজা ঢাকার মোহাম্মদপুরে বাস করেন। ঘটনার দিন তাঁরা চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। ঘটনার দিন রাতে তাঁরা রিকশায় বাসায় ফিরছিলেন। রিকশাটি সড়কের এক পাশ দিয়ে চলছিল। অপর দিক থেকে আসা একটি গাড়ি তাঁদের বহনকারী রিকশাকে ধাক্কা দেয়। আফরোজার অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন।
এদিকে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার পর স্থানীয় জনতা এক কিশোর (১৫) এবং সালমান হায়দার (২৪) নামের এক তরুণকে আটক করেন। পরে তাঁদের পুলিশের কাছে দেওয়া হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, গাড়িটি চালাচ্ছিল ওই কিশোর। সালমান হায়দার তাকে গাড়ি চালাতে দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেছেন আহত ইমরানের বাবা রফিকুল ইসলাম।
পুলিশের মোহাম্মদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মৃত্যুঞ্জয় দে প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার পরপরই কিশোরকে আইনের সংস্পর্শে আনা হয়েছে। আর তরুণকে আটক করা হয়েছে। কিশোরটি শিশু (কিশোর) উন্নয়ন কেন্দ্রে রয়েছে। আর তরুণ কারাগারে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সালমানের বাসা মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে। আর কিশোরটির বাসা মোহাম্মদপুরের শের শাহ শূরি রোডে। মঙ্গলবার বিকেলে সালমানের বাসায় গিয়ে কথা হয় তাঁর বাবা ইমতিয়াজ হায়দারের সঙ্গে।
ইমতিয়াজ হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, গাড়িটি সালমানের এক বন্ধুর। তাঁর বন্ধুর বাসা লালমাটিয়ায়। ওই বন্ধু গাড়িটি সালমানের বাসার গ্যারেজে রাখতেন। কারণ, তাঁদের বাসার কাজ চলছিল। সালমান গাড়িটি বিভিন্ন সময় নিজেই চালাতেন। তবে ঘটনার দিন ওই কিশোরকে চালাতে দিয়েছিলেন। এতেই দুর্ঘটনা ঘটে।
মোহাম্মদপুরের শের শাহ শূরি রোডে ওই কিশোরের বাসায় গিয়ে কথা হয় তার মায়ের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই কিশোরের বাবা সৌদিপ্রবাসী। কিশোরটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
কিশোরের মায়ের দাবি, সালমান কিশোরটিকে গাড়ি চালানো শেখাচ্ছিলেন। এ সময় দুর্ঘটনা ঘটে।