আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় তাঁর বাবা বললেন, ‘এখনো হত্যার বিচার পাইনি’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় অংশ নিয়ে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেছেন, ‘আবরার হত্যার রায়ের তিন বছর পার হলেও আমরা এখনো হত্যার বিচার পাইনি।’
আবরারের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর পলাশী মোড়ে এই স্মরণসভার আয়োজন করে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ নামের একটি সংগঠন। সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারাও বক্তব্য দেন।
সভায় আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, ‘আবরার ফাহাদ এই দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। প্রথম দুই বছর হত্যার বিচারের জন্য আমাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে। হত্যা মামলার রায়ের তিন বছর পার হলেও আমরা এখনো হত্যার বিচার পাইনি।’
আবরার ফাহাদ ফেসবুকে যে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর হত্যার শিকার হয়েছিলেন, সেই মূল স্পিরিট (চেতনা) এখনো বাস্তবায়িত হয়নি বলে মন্তব্য করেন আবরারের ছোট ভাই ও বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ।
আবরার ফাইয়াজ বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। যেকোনো দল বা মতের ট্যাগ দিয়ে কোনো হত্যাকে বৈধতা দেওয়া যায় না। ফাহাদের বক্তব্যের মূল স্পিরিট (চেতনা) এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ভারতের সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতি, পানিবণ্টন ও বন্দর চুক্তিতে ন্যায্যতার সম্পর্ক বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নানা দাবি
স্মরণসভায় অংশ নিয়ে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ আবরার ফাহাদ অ্যাভিনিউ’ করার দাবি জানান। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অবিলম্বে এই পরিবর্তন আনার আহ্বান জানান তিনি।
৭ অক্টোবরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আগ্রাসনবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানান আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, আবরার ফাহাদ বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক। আবরারের খুনিদের গ্রেপ্তার করা হলেও বিচারপ্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি। অতি দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে। খুনিদের মধ্যে যারা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদেরও গ্রেপ্তার করতে হবে।
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা বর্তমান সংবিধান অবিলম্বে বাতিল চাই।’ তিনি অভিযোগ করেন, গণ–অভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তিরা এখনো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা একটা মৃত্যুসনদের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি কীভাবে পদে বহাল আছেন, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘অতীতের অপশাসন, অপরাজনীতি ও অপসংস্কৃতি যেন ফিরে না আসে, সে ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘১৬ বছর ধরে আমাদের ওপর যারা নির্যাতন চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। যে প্রশাসন ছাত্রলীগের এসব নির্যাতনে প্রশ্রয় দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আরেক সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ‘আবরার ফাহাদ আমাদের সার্বভৌমত্ব ও আগ্রাসন বিরোধিতার প্রতীক।’
সভায় অন্যান্যের মধ্যে এবি পার্টির নেতা আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য আকরাম হুসাইন, সমন্বয়ক আবদুল কাদের, নাগরিক কমিটির সদস্য সালেহউদ্দিন সিফাত, শামসুন নাহার হল সংসদের সাবেক ভিপি শেখ তাসনীম আফরোজ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভ
আবরার ফাহাদের স্মরণে ২০২০ সালে পলাশীতে আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভ নির্মাণ করার পর সেটি ভেঙে ফেলা হয়েছিল। এখন সেটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ। আজ বিকেলে স্মরণসভা শেষে এই স্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
এই আট স্তম্ভ রূপক অর্থে আটটি বিষয়ের প্রতীক বলে স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এগুলো হলো সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, গণপ্রতিরক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, দেশীয় শিল্প-কৃষি ও নদী-বন-বন্দর রক্ষা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এবং মানবিক মর্যাদা।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীর নির্মম নির্যাতনে নিহত হন আবরার ফাহাদ। বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন আবরার। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার হত্যা মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।