কমলাপুর রেলস্টেশনে বুকে বিড়াল জড়িয়ে ঘুমাচ্ছিল শিশুটি
রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে ঘরমুখো মানুষের ব্যস্ততা। কেউ ট্রেনে ওঠার জন্য ছুটছেন। কেউবা ট্রেনের অপেক্ষায়।
হঠাৎ একটা দৃশ্যে চোখ আটকে যায়। স্টেশনে একটি পিলারের পাশে বুকে বিড়াল জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে একটি শিশু।
পিলারের চারপাশে যাত্রীদের বসার জন্য জায়গা আছে। সেখানেই একপাশে শিশুটি ঘুমাচ্ছিল। তার এক হাত মেঝেতে। আরেক হাত দিয়ে বিড়ালটিকে বুকে জড়িয়ে রেখেছে শিশুটি।
আজ রোববার বেলা ১১টা ২৮ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ঘুমন্ত শিশু ও তার বুকে থাকা বিড়ালটিকে পর্যবেক্ষণ করেন এই প্রতিবেদক।
ঘুমের মধ্যে বিড়ালটির পা কখনো গিয়ে ঠেকে শিশুটির মুখে। আবার কখনো বিড়ালের মুখ গিয়ে লাগে শিশুটির গালে-মুখে।
অপেক্ষা করে দেখা যায়, স্টেশনে থাকা কিছু শিশু-কিশোরের হইচইয়ে শিশুটির ঘুম ভাঙে। তবে বিড়ালটি তখনো ঘুমাচ্ছিল।
শিশুটির ঘুম ভাঙলে কথা বলে জানা যায়, তার নাম মো. রবিউল ইসলাম (১২)। বাড়ি জয়পুরহাট।
রবিউল প্রথম আলোকে বলে, কয়েক দিন আগে বিড়ালটিকে সে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় পেয়েছে। তারপর থেকে তার সঙ্গেই আছে বিড়ালটি। তবে বিড়ালটি এখন একটু অসুস্থ। কুকুরের তাড়া খেয়ে পেছনের দিকে বাম পায়ে ব্যথা পেয়েছে বেড়ালটি।
কথায় কথায় রবিউল বলে, জয়পুরহাটের রেলস্টেশন-সংলগ্ন আদর্শপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকত সে।
তার মা একটি হোটেলে কাজ করতেন। শরীরে জ্বর নিয়ে বাজার করতে গিয়ে প্রায় তিন বছর আগে তার মা একটি বাসের ধাক্কা খেয়ে মারা যান। মাস ছয়েক আগে তার বাবা মো. বেলাল আরেকটি বিয়ে করেন। পরে তিনি আদর্শপাড়ার বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান।
রবিউলের ভাষ্য, একদিন বাবার সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। কিন্তু তাকে দেখে বাবা না দেখার ভান করেন। পরে রবিউল চলে আসে।
রবিউল জানায়, বাবার বিয়ের পর সে জয়পুরহাট রেলওয়ে স্টেশনে থাকত। চার দিন আগে সে ঢাকায় এসেছে। ঢাকায় আসার পর মানুষের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করে সে। এভাবে সে ১০০ টাকার বোতল বিক্রি করেছে।
রবিউল বলে, এখানকার স্টেশনের ছেলেরা নেশা করে। তার বোতল বিক্রির টাকা নেশা করা ছেলেরা তাকে মারধর করে নিয়ে গেছে।
রবিউল এখন জয়পুরহাটে চলে যেতে চায়। সে বলে, জয়পুরহাটের রেলস্টেশনে কম ছেলে থাকে। তারা ভালো। নেশা করে না।
আজ কমলাপুর থেকে যে ট্রেন জয়পুরহাটে যাবে, সেই ট্রেনেই উঠতে চায় রবিউল। সে বলে, জয়পুরহাটে ফিরে গিয়ে বোতল কুড়িয়ে টাকা জমাবে। সেই টাকা দিয়ে পপকর্নের ব্যবসা করবে।
রবিউল বলে, জয়পুরহাটে তার থাকার মতো জায়গা নেই। পরিচিত কারও ফোন নম্বরও তার কাছে নেই।
কমলাপুর রেলস্টেশনে যে শিশু-কিশোরদের হইচইয়ে রবিউলের ঘুম ভাঙে, তাদের একজন প্রথম আলোকে বলে, ও (রবিউল) খুব ভালো ছেলে। ওর কেউ নেই দেখে, কিছু বাজে ছেলে টাকা নিয়ে গেছে।
রেলস্টেশনের এক কিশোর রবিউলকে দুটি রুটি দেয়। বলে, ‘একটা তুই খা, আরেকটা তোর বিড়ালকে দে।’