নিজেই দাঁড়াতে পারেন না বাবু মিয়া, ঘর দাঁড় করাবেন কীভাবে
রাজধানীর বনানীর গোডাউন বস্তির বাসিন্দা বাবু মিয়া। সম্প্রতি ভয়াবহ এক গাড়ি দুর্ঘটনায় গাড়িচালক (প্রাইভেটকার) বাবু মিয়ার বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের দুটি হাড়ই ভেঙেছে। অস্ত্রোপচার করা হলেও এখনো ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারেন না। কোলে ছয় মাসের সন্তান, তাই কাজে যেতে পারছেন না তাঁর স্ত্রী পোশাককর্মী মুন্নি আক্তার। পরিবারের অন্য সদস্যদের সহযোগিতায় কোনোমতে চলছিল সংসার। এর মধ্যে গত রোববার বস্তিতে লাগা আগুনে পুড়ে গেছে তাঁদের ঘর। এখন সেই ঘর কীভাবে আবার দাঁড় (মেরামত) করাবেন, সেই দুশ্চিন্তায় আছেন বাবু মিয়া।
বাবু মিয়াদের ঘরটি গোডাউন বস্তির উত্তর-পশ্চিম কোনার দিকে। আজ মঙ্গলবার পোড়া ঘরের সামনেই কথা হয় তাঁর সঙ্গে। এ সময় বাবু মিয়ার মা-বাবা ও বড় ভাই পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র সরাচ্ছিলেন।
বাবু মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত অক্টোবরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের হাড় জোড়া লাগাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। লাগানো হয় স্টিলের রিং (ইলিজারভ রিং)। পাঁচ মাস ধরে পায়ে রিং লাগানো অবস্থায় আছেন। দুই ছেলেসন্তান রয়েছে। একজনের বয়স ৭ বছর, আরেকজনের ৬ মাস। স্ত্রী মুন্নি আক্তার আগে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। কিন্তু সন্তান ছোট হওয়ায় তিনি কাজে যেতে পারেন না। স্বজনদের সহযোগিতায় তাঁদের সংসারের খরচ চলছে।
বাবু মিয়ার পায়ের অস্ত্রোপচার হয়েছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। চিকিৎসা করানোর জন্য একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে মা সখিনা বেগমের নামে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এখনো ওই ঋণের ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে পারেননি।
বাবু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক পয়সাও রোজগার নাই। সংসার চলছে বাবা-ভাইয়ের সাহায্যে। এর মধ্যে ঘরটাও পুড়ে গেল। এখন কী হবে, কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। আগের ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে ঋণও পাওয়া যাবে না। ঘরটা দাঁড় করাব কীভাবে?’
তবে বাবুর মিয়ার ঘর এবারই প্রথম পোড়েনি। চার বছর আগে করোনা মহামারির সময় ওই বস্তিতে আগুন লেগেছিল। সেই আগুনেও পুড়েছিল তাঁর ঘর। সেবার একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে নিতে হয়েছিল ৯০ হাজার টাকা ঋণ। সেই ঋণের টাকায় ঘর তুলেছিলেন।
বাবু মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বস্তির ঘর বলতে ৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থের একটি কক্ষ। এসব ঘর তৈরিতে বাঁশ কিংবা কাঠ ব্যবহার করা হয়। ঘরের বেড়া ও ছাউনি হয় টিনের। এমন ঘর তুলতে ৪০-৫০ হাজার টাকা লাগে।
বাবু মিয়ার বাবা চান মিয়া রিকশা-ভ্যান মেরামতের কাজ করেন। মহাখালী টিঅ্যান্ডটি মাঠের পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান দিয়ে এ কাজ করেন তিনি। চান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘর করতে না পারলে বউ-ছেলে নিয়ে থাকব কই? যেমনেই হোক একটা ব্যবস্থা করন লাগবই।’
গোডাউন বস্তিটি ঢাকা উত্তর সিটির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দুজন কাউন্সিলর তাদের খাদ্যসহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। মেয়রের (ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম) পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। এটি প্রক্রিয়াধীন আছে।’
গত রোববার বিকেল চারটার দিকে গোডাউন বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি ফায়ার সার্ভিস। এতে কেউ হতাহত না হলেও পুড়েছে বস্তির অনেক ঘর।