খোঁড়াখুঁড়ি, জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ নিয়েই বর্ষা কাটবে উত্তরখানবাসীর
রাজধানীর উত্তরখানের প্রধান সড়কসহ একাধিক সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। সড়ক ও নালা সংস্কারে চলমান এ কাজে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক স্থানে পায়ে হেঁটে চলার জায়গাও নেই। পয়োনালার পানিতে জলাবদ্ধ হয়ে আছে একাধিক সড়ক। বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ আরও বাড়ে। এসব কারণে প্রায় দুই মাস ধরে চরম দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে আছেন উত্তরখানের বাসিন্দারা।
তবে এমন দুর্ভোগ আর ভোগান্তি থেকে তাঁদের শিগগির মুক্তি মিলছে না। কারণ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ এবং ওই সড়কে কাজ করা ঠিকাদার বলছেন, উত্তরখানের প্রধান সড়কের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে। অর্থাৎ এর আগে আসন্ন বর্ষা মৌসুমসহ আরও কয়েক মাস দুর্ভোগ সঙ্গে করেই চলতে হবে উত্তরখানবাসীকে।
আজ বুধবার দুপুরে উত্তরখান এলাকায় চলমান সংস্কারকাজের অগ্রগতি ও বাসিন্দাদের দুর্ভোগ দেখতে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। সেখানেই সড়কের কাজ শেষ করার সম্ভাব্য ওই তারিখ জানানো হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দক্ষিণখান এলাকায় মেয়র এলাকাবাসীর সঙ্গে সভা করেছিলেন। আজ অবশ্য উত্তরখানে তেমন কোনো সভা করেননি। ফলে মেয়রের কাছে নিজেদের কষ্ট আর দুর্ভোগের কথা বলার সুযোগ হয়নি এলাকাবাসীর। এতে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আজমপুর এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল প্রথম আলোকে বলেন, এলাকাবাসী কত কষ্টে আছে, কী ভোগান্তি পোহাচ্ছে, তাদের চাওয়া কী—এসব কিছুই মেয়র জানতে চাইলেন না। শুধু নিজের কথা বলে যাচ্ছেন। এই সড়ক দিয়ে যুদ্ধ করে যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা প্রতিদিন স্কুলে যান, মেয়র তাঁদের কষ্টের কথা একবার শুনুন অন্তত।
আরেকজন বাসিন্দা আঞ্জুমান লায়লা বলেন, উন্নয়নকাজ চললে এলাকাবাসীর কিছুটা দুর্ভোগ হবে। সেটা এলাকাবাসী মেনেও নেয়। কিন্তু সিটি করপোরেশন যেভাবে কাজ করছে, এটাকে শুধু দুর্ভোগ বললে ভুল হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে ওই এলাকায় সিটি করপোরেশনের সাময়িক কোনো কার্যক্রম নেই বলেও জানান তিনি।
এর আগে আজমপুর কাঁচাবাজার এলাকায় বাসিন্দাদের উদ্দেশে কথা বলেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। মেয়র বলেন, এলাকাবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে, যানজট থেকে মুক্তি দিতেই এই উন্নয়নকাজ করা হচ্ছে। এতে এলাকাবাসীর সহযোগিতা লাগবে। ৩২ ফুট প্রস্থের আজমপুর-চামুরখান সড়কটি ৭২ ফুটের চার লেনের সড়ক করা হবে বলেও জানান মেয়র।
মেয়র আরও বলেন, ‘দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্যে কাজের গতি বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি আগামী নভেম্বরের মধ্যে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে।’
আজমপুর কাঁচাবাজার এলাকায় সড়ক সংস্কারকাজের ঠিকাদার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন প্রতিনিধি স্থানীয় বাসিন্দাদের জানান, আজমপুর-চামুরখান সড়কের ১ দশমিক ৯৮৮ কিলোমিটারের কাজ চলমান আছে। এর মধ্যে ১ দশমিক ৩০০ কিলোমিটার অংশে নালার পাইপ স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। আর মাত্র ৬০০ মিটার অংশ বাকি রয়েছে। বাকি অংশে পাইপ স্থাপনের কাজ আগামী এক মাসের মধ্যে হয়ে যাবে।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য খসরু চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি, এখানে হাঁটুর ওপরে পানি ছিল। আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি পানি সরানোর জন্য। কিন্তু পারি নাই।’
ঢাকা উত্তর সিটির ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ডি এম শামীম সেখানে বলেন, ‘আমাদের শুধুমাত্র আগামী নভেম্বর পর্যন্ত এ দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এই বর্ষাটাকে সবাই মিলে আমরা কঠিনভাবে মোকাবিলা করব।’
আজ দ্বিতীয় দিনের পরিদর্শনে মেয়র আজমপুর রেলগেট সংলগ্ন লাইজ উদ্দিন সরণি, আজমপুর কাঁচাবাজার, মুক্তিযোদ্ধা সড়ক, জালাল উদ্দিন সড়ক হয়ে আশকোনা এলাকায় গিয়ে বিকেলে পরিদর্শন শেষ করেন। এ সময় ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তা ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলররা সঙ্গে ছিলেন।