ঢাকা মহানগরের জন্য গৃহীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) কামরাঙ্গীরচরকে মিশ্র এলাকা (আবাসিক) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে চায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সেই সঙ্গে চায় ৫০ তলার একটি ভবন নির্মাণ করতেও। তবে এতে বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে এমন প্রকল্প যাতে বাস্তবায়ন করা না হয়, সে জন্য নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন তাঁরা। এরই ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন ‘কামরাঙ্গীরচর নাগরিক পরিষদের ব্যানারে’ স্থানীয় কিছু বাসিন্দা।
মুফতি আবুল হাসান নামের এক ব্যক্তি মানববন্ধন কর্মসূচিতে বলেন, তিনি দুটি মাদ্রাসা পরিচালনা করে আসছেন। এখন উচ্ছেদ–আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন। বলেন, ‘সবাইকে ঘরবাড়ি ছাড়তে হবে। আমাদের আতঙ্ক নিয়ে চলতে হচ্ছে।’ সিটি মেয়রকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘মানুষ যাতে ভিটেছাড়া না হয়, তাই শান্তিতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করুন। মানুষ ঘুমাতে পারছে না। দুশ্চিন্তার কারণে ঈদের আগে রোজা রেখে রাস্তায় নেমে এসেছি।’
যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, তাতে লোকজনকে পুরো এলাকা থেকে উচ্ছেদ করতে হবে না। ভুল ও বিকৃত তথ্যের ভিত্তিতে কিছু মানুষ আন্দোলনে নেমেছেন।
‘যেই উন্নয়নে আমরা থাকব না, সেই উন্নয়ন চাই না’ মানববন্ধনে অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন মাহবুব হোসেন নামের আরেক বাসিন্দা। আবু ইউসুফ নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, মানুষকে উচ্ছেদ করে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা শোনার পর থেকে তাঁদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
হুমায়ুন কবীর নামের একজন বলেন, কামরাঙ্গীচরের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ওইসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে তা জনকল্যাণমূলক হবে না।
দক্ষিণ সিটি যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে, তাতে কামরাঙ্গীরচরের এক–তৃতীয়াংশ জায়গার বসতবাড়ি ভেঙে ফেলতে হবে বলে মানববন্ধনে দাবি করেন এ এলাকার বাসিন্দা আবদুল করিম। তিনি বলেন, ‘সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে অনেকে কামরাঙ্গীরচরে ভবন নির্মাণ করেছেন। এমন প্রকল্প চাই না, যার কারণে বাপ-দাদার ভিটা থেকে উচ্ছেদ হতে হবে।’ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন না করতে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।
মানববন্ধনে বলা হয়, কামরাঙ্গীরচরে অন্তত ২০ লাখ মানুষ বসবাস করেন। সেখানে শত শত ভবন ভেঙে ও লোকজনকে উচ্ছেদ করে দক্ষিণ সিটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে চায়। এমন খবরে তাঁদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তাঁরা কামরাঙ্গীরচরে এমন প্রকল্প চান না।
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে গিয়ে কামরাঙ্গীরচরে ১০৪ ফুট চওড়া সড়ক নির্মাণ করা হবে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, কামরাঙ্গীচর থেকে অন্য এলাকায় বের হওয়ার পথগুলো সরু। কিছু সড়ক চওড়া মাত্র ১২ ফুট। এ পরিস্থিতিতে ১০৪ ফুট সড়ক করার যৌক্তিকতা নেই।
বাসিন্দাদের উদ্বেগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, তাতে লোকজনকে পুরো এলাকা থেকে উচ্ছেদ করতে হবে না। ভুল ও বিকৃত তথ্যের ভিত্তিতে কিছু মানুষ আন্দোলনে নেমেছেন।’ পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে কামরাঙ্গীরচরের মানুষের জীবনমান পরিবর্তনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে, এমন প্রশ্নে আবু নাছের বলেন, ‘এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প। বাস্তবায়ন করতে সময় লাগবে। কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে তা এখনো ঠিক হয়নি।’
আবাসিক প্রধান এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কামরাঙ্গীরচরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার প্রকল্প অনুমোদন হলে ড্যাপসংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটির কাছে আবেদন করতে হবে। তখন সরকার যৌক্তিক মনে করলে ড্যাপ সংশোধন করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার সুযোগ দিতে পারে।’
গত বছরের ১১ অক্টোবর কামরাঙ্গীরচরের লোহার ব্রিজ থেকে নিজামবাগ বেড়িবাঁধ পর্যন্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কামরুল সরণির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে মেয়র তাপস বলেছিলেন, ‘তুলনামূলক পিছিয়ে পড়া এলাকা কামরাঙ্গীরচরে পাঁচ তারকা হোটেল বানানো হবে। পরিকল্পিত আবাসন, কনভেনশন হল, ৫০ তলার নান্দনিক ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। বুড়িগঙ্গার তীর হয়ে চার লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে। এভাবেই কামরাঙ্গীরচরকে একটি আধুনিক নগরীতে পরিণত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’