ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি দিয়ে বৈষম্য নিরসনের দাবি পূরণে সরকারকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে বিসিএস গাইনি (জেনারেল ও সাবস্পেশিয়ালিটি) ফোরাম। এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে এই চিকিৎসকেরা ২৮ অক্টোবর থেকে কঠোর কর্মসূচি পালন করবেন। তাঁদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য ক্যাডার অন্যান্য ক্যাডারের তুলনায় পদোন্নতিতে পিছিয়ে আছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ক্যাডারের মধ্যেও গাইনি চিকিৎসকেরা বেশি বৈষম্যের শিকার।
আজ বুধবার রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিসিএস গাইনি ফোরামের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে তারা সেখানে সমাবেশও করে।
পদ না থাকলেও অতিরিক্ত পদে ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি, শূন্য পদ সাপেক্ষে পদায়ন ছাড়াও স্বকর্মস্থলে পদোন্নতি (ইনসিটু প্রমোশন) দেওয়ার দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ফোরামের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যের বিভিন্ন অংশ পড়ে শোনান চিকিৎসক রিফাত রহিম, ফাহমিদা শিরিন, আরিফা শারমিন ও মাহফুজা আসমা।
দাবি পূরণ না হলে সারা দেশের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ বা গাইনি চিকিৎসকেরা প্রথম পর্যায়ে ২৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করবেন বলে ঘোষণা দেন। তারপরও দাবি পূরণ না হলে ২ নভেম্বর থেকে পূর্ণ কর্মবিরতিতে যাবেন তাঁরা।
সংবাদ সম্মেলনের আগে সারা দেশের প্রায় ৪০০ চিকিৎসক সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় তাঁদের হাতে বিভিন্ন দাবি–সংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল। এর মধ্যে ছিল, ‘পদ নাই তাই পদোন্নতি নাই, অমূলক কথা থেকে মুক্তি চাই’, ‘বন্ধ্যত্ব চিকিৎসকের বাড়লে পদ স্বল্প আয়ের রোগী থাকবে নিরাপদ’, ‘আসুন, মরণোত্তর সহকারী অধ্যাপক (গাইনি) পদে পদোন্নতি নিয়ে আমরা নিজেদের সম্মানিত (?) করি এবং জাতিকে ধন্য করি’, ‘নাদের আলী আমি কবে প্রমোশন পাব?’, ‘প্রমোশন পেতে পেতে তো বুড়ো হয়ে যাব’, ‘তুমি কে? আমি কে? আজীবন অবহেলিত মেডিকেল অফিসার’।
সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময় পর পদোন্নতি না হওয়ায় কাজের স্বীকৃতির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন এই গাইনি চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলেন, নিজেদের ক্যাডারের অন্য ডিসিপ্লিনের সঙ্গেও রয়েছে অনেক বৈষম্য। মোট ১ হাজার ৬৬ জনের পদোন্নতিতে (জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদে পদোন্নতিযোগ্যসহ) সরকারের অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দিতে হয় না। অথচ তাঁদের একই পদে কোনো পদোন্নতি ছাড়াই ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে কাজ করতে হচ্ছে। এই দীর্ঘ পদোন্নতি জটিলতার অবসান ঘটাতে ভূতাপেক্ষভাবে পদের অতিরিক্ত পদোন্নতি ছাড়া কোনো সমাধান নেই।
ভুক্তভোগীরা জানান, ২১তম বিসিএস (আংশিক) ও ২২তম বিসিএস থেকে ২৭তম বিসিএস পর্যন্ত প্রত্যেকেই ৮ থেকে ১৫ বছর জুনিয়র কনসালট্যান্ট পদে কর্মরত আছেন। ২২ থেকে ২৩ বছরের কর্মজীবনে একটিমাত্র পদোন্নতি পেয়েছেন। ২৭তম বিসিএসের আংশিক ও তদূর্ধ্ব ১০ থেকে ১৪ বছর মেডিকেল অফিসার পদে কোনো পদোন্নতি ও গ্রেড পরিবর্তন ছাড়া কর্মরত আছেন তাঁরা।
সমাবেশে চিকিৎসকেরা জানান, প্রতিবছর ১৭০ থেকে ২০০ জন এফসিপিএস এবং ১৫ জনের মতো এমএস ডিগ্রি নিচ্ছেন। এ ছাড়া বর্তমানে ৮৬ জন সাবস্পেশালিটি চিকিৎসক ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভরোগ, বন্ধ্যত্ব গাইনি ক্যানসার বিষয়ে ডাবল এফসিপিএস পাস করেছেন। তবে ডিগ্রি থাকলেও পদোন্নতি পাচ্ছেন না। ফলে কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের ফলে পদোন্নতিবঞ্চিত চিকিৎসকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিচ্ছে ও কর্মদক্ষতা কমে যাচ্ছে। প্রজনন স্বাস্থ্যসহ মা–নবজাতকের চিকিৎসাসেবায় এর প্রভাব পড়ছে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে স্মারকলিপি জমা দেয় বিসিএস গাইনি ফোরামের একটি প্রতিনিধিদল। স্মারকলিপিতে বলা হয়, সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে অবস্ অ্যান্ড গাইনি ও সাবস্পেশালিটি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের জন্য মোট সৃষ্ট পদ ৩০৬টি, যা প্রয়োজনের তুলনায় এবং অন্যান্য বিষয়ের (মেডিসিন ও সার্জারি) তুলনায় কম। সারা দেশের সরকারি ৬৩৮টি হাসপাতালে নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মাত্র ২৭৯ জন।