৫৫ বিশিষ্টজনের বিবৃতি: মিরনজিল্লা কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযান অমানবিক
পুরান ঢাকার বংশালের আগাসাদেক রোডের পাশের মিরনজিল্লা কলোনিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তাদের উচ্ছেদ অভিযানকে ‘অমানবিক, অন্যায় ও ন্যক্কারজনক হামলা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন দেশের ৫৫ জন শিক্ষক–লেখক ও চিন্তক। অবিলম্বে এই অবৈধ উচ্ছেদ ও হামলা বন্ধ, হামলার নির্দেশদাতা ও এর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তাঁরা।
আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়। মিরনজিল্লার একটি অংশে আধুনিক কাঁচাবাজার নির্মাণ করতে চায় ডিএসসিসি। এ জন্য সেখানে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদে গত সোমবার গিয়েছিলেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তাঁরা হরিজন সম্প্রদায়ের তীব্র আপত্তি ও বাধার মুখে পড়েন। পরে তাঁরা একটি দেয়াল ও কয়েকটি স্থাপনা ভেঙে চলে যান। আজ বৃহস্পতিবার হরিজন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদপ্রক্রিয়ার ওপর ৩০ দিনের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
৫৫ জন শিক্ষক-লেখক ও চিন্তকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিরন বাঈয়ের দান করা মিরনজিল্লা কলোনির জমিতে প্রায় দুই শ বছর ধরে বংশপরম্পরায় হরিজনেরা (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) বসবাস করে আসছেন। কিন্তু ডিএসসিসি এই জমি থেকে তাঁদের উচ্ছেদ করে আধুনিক মার্কেট ও কাঁচাবাজার নির্মাণের পাঁয়তারা করছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিকভাবে হরিজন সম্প্রদায় নানা বৈষম্যের শিকার। কিন্তু হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষেরা ঠিকই এই দেশের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি থেকে শুরু করে সব কর্মকাণ্ডে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দায়িত্ব পালন করে চলেছে। এমনকি এ দেশের মুক্তিযুদ্ধে হরিজন সন্তানেরা প্রাণ দিয়েছেন। অথচ চাকরিগুলোতে হরিজনদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বরাদ্দ ৮০ ভাগ কোটা থাকার পরও তাঁদের চাকরি দেওয়া হয় না, চাকরিতে স্থায়ী করা হয় না এবং চাকরি শেষে কোনো ধরনের পেনশনের সুবিধা দেওয়া হয় না।
বিবৃতিতে বলা হয়, সমাজ এবং রাষ্ট্রে বিদ্যমান বর্ণবিদ্বেষই হরিজনদের বাধ্য করেছে নিজেদের জন্য পৃথক কলোনি তৈরি করে বসবাস করতে। কিন্তু শত শত বছর ধরে বাস করার পরও এই কলোনির জমির ওপর রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ভূমি মালিকানা তাঁদের দেওয়া হয়নি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাজার নির্মাণ করার নামে শত শত বছর ধরে মিরনজিল্লা কলোনিতে বসবাসরত জমির ওপর হরিজনদের মালিকানার অধিকারকে এভাবে ডিএসসিসি কর্তৃক খর্ব করে দখল করার অপচেষ্টা মূলত ভূমিদস্যুতার শামিল। শত শত বছর ধরে বংশপরম্পরায় বসবাসরত হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষকে জমির মালিকানা দলিল দেওয়ার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে নগদ ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে আছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদের সভাপতি আকমল হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন ও সহযোগী অধ্যাপক কাজলী সেহরীন ইসলাম, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আইনুন নাহার ও মাহমুদুল সুমন, সহযোগী অধ্যাপক স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহা মির্জা, মানস চৌধুরী, সাংবাদিক সাদিয়া গুলরুখ, শিল্পী অরূপ রাহী, হিল উইমেনস ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিরা দেওয়ান, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ফেরদৌস আহমেদ।