ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল না হলে সোমবার সারা দেশে আন্দোলন
রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চালকেরা। অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা হলে ২৭ মে (সোমবার) সারা দেশে আন্দোলন করা হবে।
আজ সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে এ ঘোষণা দেয় ব্যাটারি-ভ্যান ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ। সমাবেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইকসহ ত্রি–হুইলার ও সমজাতীয় মোটরযান নীতিমালা চূড়ান্ত করে নিবন্ধন ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের দাবি জানান সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।
সমাবেশ শেষে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে পল্টন মোড়ের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যান রিকশাচালকেরা। সেখানে আগে থেকেই পুলিশের অবস্থান ছিল। মোড়ে পৌঁছানোর আগে পুলিশ মিছিলকারীদের বাধা দেয়। সেখানেই পরে মিছিল শেষ করে সমাবেশ শেষ করা হয়।
এর আগে কয়েক শ অটোরিকশাচালক মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। এতে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তার একপাশে যান চলাচল সীমিত হয়ে যায়।
১৫ মে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে অভিযানে নামে পুলিশ। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল রোববার রাজধানীর মিরপুরে দিনভর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চালকেরা।
সমাবেশে সংগ্রাম পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সহসভাপতি জালাল আহমেদ সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, দুই দিন ধরে তাঁরা পেটের ক্ষুধায় ঘুমাতে পারছেন না। সকালেও না খেয়ে আন্দোলনে এসেছেন। বাসায় ফিরে কী খাবেন, সেটাও জানেন না। তিনি আরও বলেন, রিকশার কারণে যানজটের অজুহাত যারা দিচ্ছে, তারা প্রাইভেট কারে চলে, আর তাদের প্রাইভেটকারের কারণেই ঢাকায় বেশি যানজট হয়।
ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে দুর্ঘটনার বিষয়ে জালাল আহমেদ বলেন, কোনো সমস্যা থাকলে এটার সমাধান দরকার। এটা বন্ধ করে দেওয়া কোনো সমাধান না। আর ব্যাটারিচালিত রিকশার চেয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয়, মানুষ মারা যায় মোটরসাইকেল ও বড় যানবাহনের দুর্ঘটনায়। তাহলে আগে সেগুলোই বন্ধ করা উচিত।
সমাবেশে সংগঠনের আহ্বায়ক ও সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন বলেন, ‘কেন এই সিদ্ধান্ত? কার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত? ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহন ঢাকা মহানগরের প্রধান সড়কে চলাচল করে না। এটা মূলত মহানগরে অলিগলিতে চলে। কারণ, সেখানে কোন গণপরিবহন নেই।’
ঢাকা মহানগরে এই সংখ্যা পাঁচ লাখের ওপরে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিকল্প ব্যবস্থা না করে রাস্তা থেকে উচ্ছেদ করে এই গণপরিবহন বন্ধ করা হলে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহকারী লাখ লাখ মানুষের ও তাদের পরিবারের দায়দায়িত্ব কে নেবে?’
সমাবেশে অন্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বিজ্ঞপ্তিতে এই যান বন্ধের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, মোটর ভেহিকেল অ্যাক্ট-২০১৮ অনুযায়ী এটি অনুমোদিত নয়। কিন্তু ইতিমধ্যে ইলেকট্রিক মোটরযান চলাচলসংক্রান্ত নীতিমালা পাস হয়েছে। ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত থ্রি-হুইলার মোটরযান নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পথে। ব্যাটারিচালিত যানবাহন এই নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত। ফলে মোটর ভেহিকেল অ্যাক্ট এখানে প্রযোজ্য নয়।
সমাবেশে সংগঠনটির নেতারা সড়ক পরিবহনমন্ত্রী, বিআরটিএ ও ঢাকা মহানগরের দুই মেয়রের ঘোষণার পর মিরপুর, লালবাগ, গেন্ডারিয়া, শ্যামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রিকশা জব্দ, ব্যাটারি খুলে নেওয়া, ডাম্পিং, চালক-মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের হয়রানির এবং মিরপুর এলাকায় আন্দোলনরত রিকশাশ্রমিকদের ওপর পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানান।
রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের অর্থ সম্পাদক রোখশানা আফরোজের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন অর্থ সম্পাদক জুলফিকার আলী, সংগ্রাম পরিষদ কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ সদস্য আবু নাঈম খান বিপ্লব, রাহাত আহমেদ, এস এম কাদির, ঢাকা মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক দাউদ আলী মামুন, সদস্য সেকান্দার আলী, আবদুস সালাম প্রমুখ।