নববর্ষের উৎসবে বিদেশিরা, জানলেন বাঙালি সংস্কৃতি সম্পর্কে
নারী-পুরুষ মিলিয়ে দলটা বেশ বড়সড়। সবাই চীনের নাগরিক। শাহবাগ থেকে হেঁটে চারুকলা, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় ঘুরছিলেন। চারুকলা অনুষদের ভেতরে মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য বানানো বড় আকারের পাখি, ফুল ও হাতির প্রতীকের সঙ্গে ছবি তোলার সময় তাঁদের সঙ্গে কথা হয়।
চীনের এই দল ব্যবসায়িক কাজে বাংলাদেশে এসেছে। গৃহস্থালি ইলেকট্রনিক সামগ্রী বিক্রয়প্রতিষ্ঠান হায়ার বাংলাদেশের কর্মকর্তা তাঁরা। কাজের ফাঁকে বাংলা নবর্বষ উদ্যাপন দেখতে বেরিয়েছেন। আজ রোববার সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রার সময় থেকেই তাঁরা আনন্দ করছিলেন নিজেদের মতো।
হায়ার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ওয়াং জিয়াং জিং প্রথম আলোকে বলেন, এই উৎসব অনেক প্রাণবন্ত। বাংলাদেশের মানুষ অনেক বন্ধুবৎসল ও অতিথিপরায়ণ। গরমে কষ্ট হলেও ঘুরতে ভালো লাগছে।
জিয়াং জানান, বাংলা নববর্ষের মতো চীনেও নববর্ষের আয়োজন করা হয়। চীনের নববর্ষে আতশবাজির ব্যবহার বেশি হয়। দুই দেশের নববর্ষে মানুষের উপস্থিতি একই রকম থাকে।
পয়লা বৈশাখের উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা। আজ সকাল সোয়া নয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রায় বেশ কয়েকজন বিদেশিও অংশ নেন। নববর্ষের বিভিন্ন আয়োজনে বেশ আগ্রহ দেখা যায় তাঁদের মধ্যে। কেউ রমনার বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে গান শুনছিলেন, কেউ চারুকলায় ঘুরছিলেন।
চারুকলা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) যাওয়ার পথে কয়েকজন চীনের নাগরিক তালপাতায় তৈরি হাতপাখা কিনছিলেন। তাঁরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে বাংলা ভাষা শিখতে এসেছেন। তাঁরা বলেন, বাংলা ভাষা শিখতে এখানে এসেছিলেন। বাংলা নববর্ষ তাই বেশ আগ্রহ নিয়ে সবাই ঘুরতে বের হয়েছেন।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ২০১৬ সালে পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে। লোকশিল্প, বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ ধরে রাখা শোভাযাত্রার লক্ষ্য। মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাংলার লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন উপকরণ, গ্রামীণ জীবনের অনুষঙ্গ, পশুপাখি, ফুল—এসবের প্রতীক ও রকমারি মুখোশ বহন করা হয়।
বিদেশিরা বাংলাদেশি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকেই নববর্ষে আয়োজন দেখতে চেয়েছেন বলে জানালেন হায়ার বাংলাদেশের মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান মো. রোকনুজ্জামান। তিনি প্রতিষ্ঠানটির বিদেশি কর্মকর্তাদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরছিলেন।
রোকনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, চীনের এই নাগরিকদের কেউ দুই বছর ধরেও বাংলাদেশে আছেন। একটা বড় দল সম্প্রতি দেশে এসেছে। শুরু থেকেই পয়লা বৈশাখ নিয়ে তাদের আগ্রহ ছিল।
আজ বিকেল চারটার দিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চীনা নাগরিকদের দলটি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, পানাম নগরে ঘুরছিল।
সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রা দেখতে বিদেশিদের আরেকটি দল আসে। সাড়ে নয়টার দিকে শাহবাগ মোড়ে দেখা যায়, তারা শোভাযাত্রার নাচ-গানের ভিডিও করছিল, ছবি তুলছিল। একজন প্রবীণ ব্যক্তি একতারা বাজিয়ে নাচছিলেন। বিদেশিরা বেশ আগ্রহ নিয়ে তাঁর নাচের ভিডিও নিচ্ছিলেন। এই বিদেশিদের একজন জানান, নববর্ষের আয়োজনে আসতে পেরে উল্লসিত। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা পাচ্ছেন।
এবার মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। তিনি বলেন, বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ। এর মূল চেতনা ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের জন্য অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন। তিনি বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এবার বেশ কয়েকজন বিদেশিও অংশ নিয়েছেন। এভাবে বাঙালি সংস্কৃতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই।’