রাজধানীতে চুরি কমছে না কেন, প্রশ্ন ডিএমপি কমিশনারের
রাজধানীতে অন্যান্য অপরাধ কমলেও চুরি কমছে না কেন সেই প্রশ্ন তুলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। সেই সঙ্গে থানায় মামলা হলেও চোরাই মালামাল উদ্ধার কিংবা আসামি গ্রেপ্তার হচ্ছে না বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
আজ বুধবার রাজধানীর শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণিতে ডিএমপি সদর দপ্তরে আয়োজিত গত ডিসেম্বরের মাসিক অপরাধসংক্রান্ত সভায় ডিএমপি কমিশনার এই প্রশ্ন ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এ সভা হয়। সভায় ডিএমপির সব থানার ওসি, সব অপরাধ বিভাগের সহকারী কমিশনার থেকে উপকমিশনার এবং ডিএমপি সদর দপ্তরের যুগ্ম কমিশনার থেকে অতিরিক্ত কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অপরাধ যাতে না বাড়ে, সেদিকে পুলিশ কর্মকর্তাদের সক্রিয় থাকার নির্দেশ দিয়ে ডিএমপি কমিশনার থানাকে জনগণের আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তুলে সবাইকে সেবা দেওয়া এবং মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করার নির্দেশ দেন পুলিশ সদস্যদের প্রতি।
সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, গত বছরের নভেম্বরে হঠাৎ বাসাবাড়িতে চুরির ঘটনা বেড়ে যায়। চুরির মামলায় চোরাই মালামাল উদ্ধার কিংবা আসামি গ্রেপ্তার হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি। বলেন, ‘আবার এসব মামলায় কাউকে অভিযোগপত্রভুক্ত না করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। তাহলে তো মনে করতে হবে, তদন্তকারী কর্মকর্তা কোনো কাজ করে না।’
গত বছরের চুরির মামলাগুলো বিশ্লেষণ করে কী কারণে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হলো, সে বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে তাঁর কাছে প্রতিবেদন দিতে ৫০ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন ডিএমপি কমিশনার।
ঢাকার পুলিশপ্রধান খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রাজধানীতে চুরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তা বন্ধ করতে হবে। চুরি প্রতিরোধে বাসাবাড়ি ও পাড়ামহল্লায় স্থাপিত ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি) ডিএমপির মনিটরিং ব্যবস্থার আওতায় আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি।
অপরাধ যাতে না বাড়ে, সেদিকে পুলিশ কর্মকর্তাদের সক্রিয় থাকার নির্দেশ দিয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বেশি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করার নির্দেশ দেন। থানাকে জনগণের আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তুলে সবাইকে সেবা দেওয়া এবং মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করারও নির্দেশ দেন তিনি।
ডিএমপি সূত্র জানায়, রাজধানীতে চুরি কমাতে গত বছরের ডিসেম্বরে ডিএমপি কমিশনার পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করেছিলেন।
পুরস্কৃত পুলিশ সদস্যরা
অপরাধ বিশ্লেষণ, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পরবর্তী কর্মপন্থা ও কর্মকৌশল সম্পর্কিত নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি কর্ম উদ্দীপনা বাড়াতে সভায় পুলিশ সদস্যদের পুরস্কৃত করেন ডিএমপি কমিশনার।
ডিসেম্বরের অপরাধসংক্রান্ত সভায় আজ ডিএমপির আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধানসহ ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ডিএমপির বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যকে নগদ অর্থ দিয়ে পুরস্কৃত করেন খন্দকার গোলাম ফারুক।
মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ডিএমপির ৮টি অপরাধ বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছে মিরপুর বিভাগ। শ্রেষ্ঠ থানা হয়েছে মোহাম্মদপুর থানা। সহকারী পুলিশ কমিশনারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন লালবাগ বিভাগের চকবাজার অঞ্চলের জায়েন উদ্দীন মুহাম্মদ যিয়াদ। পুলিশ পরিদর্শকদের (তদন্ত) মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন লালবাগ থানার মো. শাহ আলম। পুলিশ পরিদর্শকদের (অপারেশন) মধ্যে প্রথম হয়েছেন ভাটারা থানার মো. মোরশেদ আলম।
শ্রেষ্ঠ উপপরিদর্শক (এসআই) যৌথভাবে নির্বাচিত হয়েছেন পল্টন মডেল থানার মো. মিজানুর রহমান ও চকবাজার থানার মো. মামুন হোসেন। বিস্ফোরক উদ্ধার করে প্রথম হয়েছেন চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মোহাম্মদ আলী শিকদার। মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে শ্রেষ্ঠ পল্টন মডেল থানার এএসআই সঞ্জয় কুমার এবং চোরাই গাড়ি উদ্ধার করে প্রথম হয়েছেন দারুস সালাম থানার এসআই রহমত উল্লাহ।
অস্ত্র উদ্ধার করে প্রথম হয়েছেন বিমানবন্দর থানার এসআই মো. মিকাইল মোল্লা। ওয়ারেন্ট তামিলকারী কর্মকর্তা হিসেবে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছেন চকবাজার মডেল থানার এসআই মো. মামুন হোসেন। সহকারী উপপরিদর্শকদের (এএসআই) মধ্যে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন পল্টন মডেল থানার সঞ্জয় কুমার ও মতিঝিল থানার মো. নুরুল ইসলাম।
৯টি গোয়েন্দা বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছে গোয়েন্দা-তেজগাঁও বিভাগ। শ্রেষ্ঠ দলনেতা হয়েছেন গোয়েন্দা-তেজগাঁও বিভাগের তেজগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. শাহাদত হোসেন। তিনি মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেও শ্রেষ্ঠ দলনেতা নির্বাচিত হয়েছেন। চোরাই গাড়ি উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ দলনেতা গোয়েন্দা-গুলশান বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ দলের সহকারী পুলিশ কমিশনার জ্যোতির্ময় সাহা। অজ্ঞান ও মলম পার্টি গ্রেপ্তারে শ্রেষ্ঠ দলনেতা হয়েছেন গোয়েন্দা-রমনা বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ দলের সহকারী পুলিশ কমিশনার নাজিয়া ইসলাম।
আটটি ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছে উত্তরা বিভাগ। ট্রাফিকের শ্রেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার হয়েছেন উত্তরা বিভাগের উত্তরা পূর্ব-ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম। শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক পরিদর্শক হয়েছেন রমনা বিভাগের ধানমন্ডি-ট্রাফিক জোনের ট্রাফিক পরিদর্শক মো. মেহেদী হাসান। শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক সার্জেন্ট যৌথভাবে নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাফিক-ধানমন্ডি জোনের সার্জেন্ট মো. রেজাউল হক ও তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর-ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট আবদুল কাদের।
এ ছাড়া ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগসহ ১৩টি বিভাগ এবং বিভিন্ন পদমর্যাদার সদস্যদের বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়। সভা সঞ্চালনা করেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) বিপ্লব বিজয় তালুকদার।