পানির মূল্যবৃদ্ধি নয়, ওয়াসার উচিত দুর্নীতি বন্ধে নজর দেওয়া

রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী পানির দাম নির্ধারণ করতে চায় ওয়াসা। এ লক্ষ্যে এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণবিষয়ক টেকনিক্যাল স্টাডির ফলাফল গতকাল রোববার উপস্থাপন করেছে সরকারি এই সংস্থা। ওয়াসার নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, নিম্ন আয়ের মানুষ তথা বস্তিবাসী ছাড়া রাজধানীর অন্য বাসিন্দাদের আরও বেশি দামে পানি কিনতে হবে। ওয়াসায় এমন প্রস্তাবের যৌক্তিকতাসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ মোস্তফা

দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান
ফাইল ছবি

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণের প্রস্তাবে ওয়াসা ধনীদের কাছ থেকে বাড়তি দাম নেওয়ার প্রস্তাব করেছে। এই প্রস্তাব কতটা বাস্তবসম্মত?

গোলাম রহমান: এই পদ্ধতি চালু হলে দেখা যাবে, পানি শুধু তাঁরাই পাচ্ছেন, যাঁরা বেশি দামে কিনছেন। আর যাঁরা কম দামে পানি পাবেন, তাঁদের পানির গুণগত মান খারাপ হবে। শ্রেণিভিত্তিক পানি বিক্রি শুরু হলে দেখা যাবে ওই বেচারারা (নিম্ন আয়ের মানুষ) ঠিকমতো পানি পাচ্ছেন না।

প্রশ্ন :

ধনীদের কথা বলে বস্তি এলাকা বাদে রাজধানীর সব এলাকায় পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কতটা যুক্তিসংগত?

গোলাম রহমান: বস্তি বাদে সব এলাকায় পানির দাম বাড়ানো যৌক্তিক বলে মনে করি না। পানির দাম প্রতিবছর ৫ শতাংশ বাড়ে। তাদের অপচয়, অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধে নজর দেওয়া উচিত। ওয়াসার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনেক অভিযোগ আছে। সেদিকে তাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত। তারা নিজেদের বেতন বাড়ানোর জন্য মানুষকে জিম্মি করে। পানি ছাড়া এক দিনও চলা যায় না। এর কোনো বিকল্প সরবরাহকারী নেই। তারা মানুষকে জিম্মি করছে। পানি সরবরাহ একটি সেবা। কিন্তু তাদের মধ্যে সেবার মনোভাব নেই। সেবা তো নেই, উল্টো ঢাকা ওয়াসা আছে কীভাবে নিজেদের বেতন-ভাতা বাড়ানো যায়, সেই চিন্তায়। তারা অপচয় আর অমিতব্যয়িতার মাধ্যমে মানুষের ওপর ব্যয়ের বোঝা বাড়াচ্ছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রশ্ন :

কিছুদিন আগে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আবার কেন দাম বাড়ানোর চিন্তা?

গোলাম রহমান: তাদের (ঢাকা ওয়াসা) আইনেই আছে, তারা প্রতিবছর ৫ শতাংশ দাম বাড়াতে পারবে। এর বেশি বাড়াতে হলে সরকারের অনুমোদন লাগবে।‌ প্রধানমন্ত্রী অনেক বেশি চিন্তাশীল ও জনদরদী। তিনি নিশ্চয়ই এ ধরনের প্রস্তাবে সায় দেবেন না।

প্রশ্ন :

ওয়াসা বলছে, সরকারের কাছ থেকে ভিক্ষা নিয়ে তাদের চলতে হচ্ছে। অন্যদিকে বিপুল অঙ্কের বোনাস নিচ্ছেন কর্মকর্তারা। এটি কেমন হলো?

গোলাম রহমান: সরকারের টাকা ভিক্ষা নয়। সরকার ভর্তুকি দিয়ে থাকলে সেটি প্রয়োজন মনে করে দিয়েছে। ভর্তুকির টাকা তো জনগণের টাকা। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বেতন কমানো উচিত। একজন অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম সচিবকে সেখানে বসানো হোক। সরকারের অতিরিক্ত সচিবেরা যদি বিমান পরিচালনা করতে পারেন, পেট্রোবাংলা চালাতে পারেন, রাজউক চালাতে পারেন, তাহলে ওয়াসা কেন চালাতে পারবেন না। তাঁদের বেতন এক লাখ টাকার কম। ওয়াসা কেন সাত লাখ টাকা দিয়ে এমন এমডি বসাবে, যার একমাত্র ফোকাস পানির দাম বাড়ানো।

প্রশ্ন :

এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সার্বিকভাবে করণীয় কী?

গোলাম রহমান: আগে ওয়াসাকে সংস্কার করা দরকার। ওয়াসার অপচয়, দুর্নীতি, অমিতব্যয়িতা বন্ধ করা উচিত।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ

গোলাম রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ।