উত্তরা দিয়াবাড়ি হাট: রাতে জমজমাট বিক্রি, এখন প্রায় ফাঁকা
হাটে গরু রাখার জন্য বাঁশের খুঁটি পুঁতে, ত্রিপল টানিয়ে জায়গা তৈরি করা হয়েছে। ত্রিপলের ছাউনি ছাড়াও গরু রাখার জায়গা রয়েছে।
কিন্তু গরু রাখতে বানানো নির্ধারিত বেশির ভাগ জায়গাই ফাঁকা। খুঁটিতে বাঁধা নেই গরু। সামান্য কিছু গরু যা আছে, তা রাস্তার পাশে এনে দাঁড় করিয়ে রাখছেন খামারি ও পাইকারেরা।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উত্তরার দিয়াবাড়ি হাটে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। হাটটির ইজারাদারের লোকজন, গরু নিয়ে আসা পাইকার ও খামারিরা বলছেন, রাতে হাটভর্তি গরু ছিল। ক্রেতাও ছিল অনেক। গত রাতেই হাটের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ গরু বিক্রি হয়ে গেছে।
পাইকারেরা বলেন, যেসব গরু এখনো হাটে রয়ে গেছে, এগুলোর বেশির ভাগই আকারে বড়। এ ছাড়া সকালে বেশ কিছু ট্রাক গরু নিয়ে হাটে এসেছে। যে কারণে হাটে কিছু গরু এখনো দেখা যাচ্ছে।
সিদ্দিকুর রহমান নামের কুষ্টিয়ার এক পাইকার ১৩টি গরু নিয়ে হাটে এসেছিলেন। গত রাতে তাঁর ৭টি গরু বিক্রি হয়েছে। আর শুক্রবার বিক্রি করেছিলেন ৪টি গরু।
সিদ্দিকুর প্রথম আলোকে বলেন, গত কোরবানির ঈদের আগের দিন দাম একেবারে পড়ে গিয়েছিল। তাই এবার আর তিনি কোনো ঝুঁকি নেননি। অতিরিক্ত লাভের আশা না করে সীমিত লাভে গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। গরুপ্রতি সব খরচা বাদে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা লাভ হয়েছে তাঁর।
হাট ফাঁকা, তাই আবার গরু আনছেন কি না, তা জানতে চাইলে সিদ্দিকুর বলেন, ‘আর কোনো রিস্ক নিমু না। যে দুইটা আছে, এইডা বিক্রি কইরা বাড়িতে চইলা যাইমু। কারণ, হাটে যেমন গরু নাই, তেমনি ক্রেতাও আর নাই। যারা কিনার, তারা গত দুই দিন হাট ঘুরে কিনে ফেলছে।’
পুরান ঢাকার পাকিস্তানি মাঠ এলাকা থেকে উত্তরা দিয়াবাড়ি হাটে গরু কিনতে আসেন সৈকত হাওলাদার। তিনি আজ প্রথমে গিয়েছিলেন হাজারীবাগে। এরপর গাবতলী হাটে। পরে তাঁর উত্তরার এক আত্মীয় তাঁকে জানান, এখানকার (দিয়াবাড়ি) হাটে গরুর দাম অন্যান্য হাটের তুলনায় কম। এ কারণে হাটটিতে বিক্রি ভালো হচ্ছে। এ তথ্য পেয়ে তিনি এই হাটে আসেন। প্রায় ১০ মণ ওজনের একটি গরু ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকায় কেনেন।
সৈকত বলেন, ‘গাবতলীতে এখনো অনেক গরু আছে। কিন্তু পাইকারেরা দাম ছাড়ছেন না। পরে শুনলাম, এই হাটে দাম কম। তাই সকালে চলে আসি। এসে গরু পছন্দ হওয়ায় আর দাম সাধ্যের মধ্যে থাকায় কিনে ফেলেছি।’
চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ী বদর আলী বলেন, তিনি ৭টি গরু এনেছিলেন। গতকাল শনিবার দুপুরের মধ্যে ৫টি গরু বিক্রি হয়ে যায়। তখনই এলাকায় ফোন করে তিনি জানান, আরও গরু লাগবে। আজ সকালে তাঁর আরও ১১টি গরু হাটে এসেছে। বেলা ১১টার মধ্যে এখান থেকে ৩টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। এ হাটে গরুর দাম নিয়ে ক্রেতাদের মন খারাপ করতে দেখা যায়নি। পছন্দের গরু কিনে ক্রেতাদের খুশিমনে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে।
উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা মারুফ হাসান দিয়াবাড়ি হাট থেকে আজ সকালে ৪ মণের বেশি ওজনের একটি গরু ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকায় কেনেন। বেলা ১১টার দিকে হাসিলঘরের সামনে গরুটি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।
মারুফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল পর্যন্ত চারটি গরু কিনেছি। আজকে আরেকটা কিনলাম। বিক্রেতারা অতিরিক্ত দাম চাননি।’
দিয়াবাড়ি হাটে হাসিল আদায়ের দায়িত্বে থাকা শফিকুল ইসলাম বলেন, রাতে হাটে প্রচুর ক্রেতা ছিল। বিক্রিও হয়েছে দেদার। হাসিল আদায়ে রীতিমতো দীর্ঘ সারি ছিল। দাম নিয়ে বিক্রেতা ও পাইকারদের মন কিছুটা বেজার দেখা গেছে। তবে ক্রেতারা খুশি ছিলেন।
এদিকে আজ সকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতাধীন যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজসংলগ্ন খালি স্থানে থাকা হাটে গরু রাখার জন্য নির্ধারিত বেশির ভাগ জায়গা ফাঁকা দেখা গেছে।