ঢাকা ওয়াসার ডিএমডি ইয়াজদানীর নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ
ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে সৈয়দ মো. গোলাম ইয়াজদানীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রায় দেন।
আদালতের রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ইয়াজদানীকে চাকরিতে স্বপদে পুনর্বহাল করতে এবং তাঁর বকেয়া বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার কিছু অনিয়মের বিষয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন ইয়াজদানী।
আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, গত বছরের ২২ জুন ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) পদে সৈয়দ মো. গোলাম ইয়াজদানীর নিয়োগের চুক্তি বাতিল করে ঢাকা ওয়াসা বোর্ড। এই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে ইয়াজদানী রিট করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৬ জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন।
রুলে রিট আবেদনকারীকে (ইয়াজদানী) চাকরি থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ব–বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বকেয়া বেতন ও আইনগত সুবিধাদিসহ তাঁকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পুনর্বহাল করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে আজ রায় দেওয়া হয়।
আদালতে সৈয়দ মো. গোলাম ইয়াজদানীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব, তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী বায়েজীদ হোসাইন ও সোলায়মান তুষার। ওয়াসার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী নাহিয়ান ইবনে সোবহান।
আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের সঙ্গে ইয়াজদানীর কিছু বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য তৈরি হয়। বিশেষ করে প্রশাসনিক কাজ ও চলমান অনিয়ম নিয়ে তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। একপর্যায়ে এমডি ঢাকা ওয়াসার বোর্ডে ইয়াজদানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। অভিযোগ উত্থাপন ও তাঁর নিয়োগ বাতিল করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থের সুযোগ তাঁকে দেওয়া হয়নি। তাঁকে বোর্ডেও ডাকা হয়নি। এমনকি সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে ব্যক্তিগতভাবে কোনো ধরনের শুনানির সুযোগও ইয়াজদানীকে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া নিয়োগ চুক্তি বাতিল করে বরখাস্তের ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদনও নেওয়া হয়নি। যে কারণে রিটটি করা হয়।
রায়ের বিষয়ে ইয়াজদানীর এই আইনজীবী বলেন, তিন বছরের জন্য ইয়াজদানীকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। চাকরিরত অবস্থায় হঠাৎ করে বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়োগ চুক্তি বাতিল করে ইয়াজদানীকে বরখাস্ত করে। এই সিদ্ধান্ত আইনগত কর্তৃত্ব–বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাঁকে চাকরিতে স্বপদে পুনর্বহাল করতে এবং তাঁর বকেয়া বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে ওয়াসার আইনজীবী নাহিয়ান ইবনে সোবহান প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, সৈয়দ মো. গোলাম ইয়াজদানীকে ডিএমডি (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) পদে ২০২২ সালের ১৬ মে নিয়োগ দেয় ওয়াসা বোর্ড। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী একজন ডিএমডির মেয়াদ ৩ বছর। সে অনুযায়ী ২০২৫ সালের ১৫ মে পর্যন্ত তাঁর দায়িত্ব পালনের কথা। কিন্তু কিছু অসংগতির বিষয়ে আপত্তি দেওয়ায় ইয়াজদানী ওয়াসা প্রশাসনের বিরাগভাজন হন।