ছাত্রটিকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যান চালক, গাড়িটি এক রাজস্ব কর্মকর্তার
রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় বিজি প্রেসের সামনে দুর্ঘটনায় এক স্কুলছাত্র নিহতের ঘটনায় মাইক্রোবাসের চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার সকালে আশুলিয়ার বিশ মাইল এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার চালকের নাম জিয়াউল হক (৫০)। মাইক্রোবাসটিকেও জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মহাখালীর দিক থেকে আসা একটি মাইক্রোবাস ছেলেটিকে ধাক্কা দেয়। মাইক্রোবাসটির সামনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের স্টিকার লাগানো ছিল। মাথায় আঘাত পেয়ে ছেলেটি রাস্তায় ছিটকে পড়ে। এরপর গাড়ির গতি বাড়িয়ে দ্রুত এলাকা ছেড়ে সাভারের আশুলিয়ায় গিয়ে আত্মগোপন করেন চালক জিয়াউল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গাড়িটি একজন রাজস্ব কর্মকর্তার। তবে ঘটনার সময় তিনি গাড়িতে ছিলেন কি না, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গতকাল রোববার তেজগাঁও এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় স্কুলছাত্র আলী হোসেন (১৬)। সে তেজগাঁওয়ের সরকারি বিজ্ঞান হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। আলী হোসেন পরিবারের সঙ্গে তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকত। ঘটনার পর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা করেন নিহতের বাবা।
তাজোয়ার রহমান নামের নিহত আলী হোসেনের এক বন্ধু প্রথম আলোকে বলে, ‘একটি গাড়ি ধাক্কা দেওয়ার পর আমার বন্ধু ১৫ মিনিটের মতো রাস্তায় পড়ে ছিল। কেউ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া হলে আলী হোসেন হয়তো বেঁচে যেত।’
চালককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানাতে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার কমিশনারের কার্যালয়ে আজ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক বলেন, দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকার ৩৭টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সেখানে একটি ফুটেজ দেখে ওই গাড়ি শনাক্ত করা হয়। পরে ঘটনাস্থলের পাশে দায়িত্বে থাকা একজন ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে গাড়িচালককে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজিমুল হক বলেন, ফুটেজে দেখা যায়, গাড়িটি স্বাভাবিক গতিতে মহাখালীর দিক থেকে তেজগাঁওয়ের দিকে আসছে। সকাল ৭টা ১৫ মিনিটের দিকে হঠাৎ একটা শব্দ শুনতে পান এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য। ওই পুলিশ সদস্যের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, দুর্ঘটনার পর একটি গাড়ি খুব দ্রুতগতিতে চালিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর চালক তাঁর মুঠোফোন বন্ধ করে আশুলিয়ায় গিয়ে আত্মগোপন করেন।
গাড়ির সামনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড লেখা রয়েছে। গাড়িটি রাজস্ব বোর্ডের কি না, জানতে চাইলে উপকমিশনার আজিমুল হক বলেন, চালককে গ্রেপ্তারের পর মাইক্রোবাসের মালিকের নাম পাওয়া গেছে। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে আজিমুল হক বলেন, চালকের গাড়ি চালানোর কাগজপত্র রয়েছে। তবে সেগুলো সঠিক কি না, যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে সহপাঠী হত্যার বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আজ ফার্মগেটে সড়ক অবরোধ করেছে তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ ব্যানারে দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। এ সময় তাঁরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার বন্ধু কবরে, খুনিরা কেন বাহিরে’ স্লোগান দিতে থাকে। এতে ফার্মগেটের পূর্ব পাশের রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গভর্নমেন্ট সায়েন্স স্কুল ও তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা ফার্মগেটের আল-রাজী হাসপাতালের সামনে মিছিল নিয়ে জড়ো হয়। পরে দুপুর ১২টার দিকে রাস্তায় বসে বিক্ষোভ শুরু করে তারা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরানোর চেষ্টা করলেও কাজ হয়নি। পুলিশের পাশাপাশি তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকেরাও তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে ভিজে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে বিজয় সরণি মোড়ে যায়। সেখানে গিয়ে ১০ মিনিট অবস্থানের পর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ফার্মগেটের আল-রাজী হাসপাতালের সামনে আসে। পরে শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছেড়ে চলে যায়। এরপর বেলা দেড়টার দিকে ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী তাজোয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলে, ‘আমরা নিরাপদ সড়ক চাই। আমরা স্কুল-কলেজে শিক্ষার জন্য বেরিয়ে কেন চিন্তায় থাকব যে রাস্তায় কখন কোন দুর্ঘটনা ঘটে?’