মিরপুর ১০ নম্বরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ

মিরপুর ১০ নম্বরে পুলিশ বক্সে আগুন নেভানোর কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসছবি: খালেদ সরকার

রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় পুলিশ বক্সে দেওয়া আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে তিনটার দিকে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সি ছাব্বীর আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ বক্সের আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়েছে। আমিসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

এর আগে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে বেলা দুইটার কিছু পরে একটি পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ের পাশে নির্মাণাধীন একটি ভবনে দুজন পুলিশকে মারধর করা হয়।

রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ চলছে।

বেলা তিনটার দিকে ১০ নম্বর এলাকায় আন্দোলনকারীদের অবস্থান করে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। এ সময় তাঁরা খণ্ড খণ্ড মিছিল করছিলেন। স্লোগান দিচ্ছিলেন। এ সময় ওই এলাকায় পুলিশ দেখা যায়নি।

মিরপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ
ছবি: খালেদ সরকার

এর আগে বেলা দুইটার কিছু পরে মিরপুর ১০ নম্বরের একটি পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। বেলা পৌনে তিনটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা লিমা খানম বিষয়টি জানিয়েছেন।

এর আগে মিরপুর ১০ নম্বরে সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ের পাশে নির্মাণাধীন একটি ভবনে দুজন পুলিশকে মারধর করা হয়েছে। মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সি ছাব্বীর আহম্মেদ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

বেলা একটার দিকে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা গোলচত্বরে অবস্থান নেন। আর আন্দোলনকারীদের অবস্থান ছিল গোলচত্বর থেকে কাজীপাড়ার দিকে আসতে আল-হেলাল হাসপাতালের সামনে। আন্দোলনকারীদের আরেকাংশের অবস্থান ছিল মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের দিকে। বেলা একটার দিকে প্রথম আলোর প্রতিবেদক ঘটনাস্থল থেকে বলেন, পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ছে। এর আগে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়েছে।

দুপুর সোয়া ১২টার পরে মিরপুরে ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় আন্দোলনকারীরা ধাওয়া দিয়ে পুলিশকে মিরপুর থানার দিকে নিয়ে যায়। আবার পুলিশ ধাওয়া দিয়ে আন্দোলনকারীদের মিরপুর ১০ নম্বরের দিকে নিয়ে যায়।

এর আগে ১০ নম্বর গোলচত্বরের পশ্চিম পাশে পুলিশকে লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীদের ইট-পাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। জবাবে পুলিশও সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।মিরপুর ও এর আশপাশের এলাকায় সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।

এদিকে আজ সকাল ১১টার দিকে মিরপুর ১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। ওই সময় পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দিয়ে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার ভেতরে পাঠিয়ে দেয়। আন্দোলনকারীরা জানান, সেখানে পুলিশ ও যুবলীগের সদস্যরা তাঁদের পিটিয়েছে।

এ বিষয়ে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় পুলিশ কাউকে ধাওয়া করেনি।

এর আগে সকাল ১০টার দিকে মিরপুর টোলারবাগে ডেল্টা মেডিকেল কলেজ ও হাসাপাতাল এলাকার সড়কে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাঁদের হটিয়ে দেয়।

গতকাল বুধবার ছুটির দিনেও ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র বিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

‘শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ-বিজিবি-র‍্যাব ও সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে’ আজ বৃহস্পতিবার কমপ্লিট শাটডাউন (সর্বাত্মক অবরোধ) পালন করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচি চলাকালে শুধু হাসপাতাল, গণমাধ্যমসহ অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।