সাত কলেজকে স্বতন্ত্র রূপ দিতে শিগগিরই বিশেষজ্ঞ কমিটি: শিক্ষা উপদেষ্টা
ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি বাতিল করে একটি আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ বা স্বাধীন সত্তা হিসেবে রূপ দিতে শিগগিরই একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সেই স্বতন্ত্র সত্তার নাম সবার সঙ্গে আলোচনা করে দেওয়া হবে।
আজ বুধবার ঢাকা কলেজের ১৮৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার। এর পর থেকে নানা ভোগান্তির অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। সম্প্রতি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সাত কলেজকে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলন শুরু করছেন।
উপদেষ্টা অধাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘কয়েক বছর আগে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী কলেজগুলোকে একটা অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। এই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা নানা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। তাঁরা সেশনজট, পরীক্ষাসংক্রান্ত জটিলতাসহ নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। আমি তাঁদের প্রতি সমবেদনা জানাই।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছিলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি থেকে ঐতিহ্যবাহী কলেজগুলোকে আলাদা করে একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ কীভাবে দেওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি থেকে বের করে একটা আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ বা একটা স্বাধীন সত্তা হিসেবে কীভাবে সংগঠিত করা যায়, সে জন্য আমরা একটা কমিটি করেছিলাম। সেই কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরপর আমরা শিগগিরই একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করতে যাচ্ছি সর্বোচ্চ স্তরের, যারা এই কলেজগুলোর একটা একত্রিত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে।’
কলেজগুলোকে কীভাবে আরও স্বায়ত্তশাসন দেওয়া যায়, তাদের সুযোগ–সুবিধা ও অবকাঠামো কী করে আরও বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে চিন্তা রয়েছে বলে জানান ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘সেই স্বতন্ত্র সত্তার নাম তোমাদের সবার সঙ্গে আলোচনা করে দেওয়া হবে। মনে রেখো, যে নামই দাও না কেন, আসল কথা হলো শিক্ষার মানের উন্নতি, শিক্ষার বৈষম্যরোধ করা। সবচেয়ে বড় শিক্ষাবিদদের নিয়ে যে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হবে, তারা কীভাবে কাজ করছে, তা তোমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পারবে। এটার জন্য বসে থেকে কোনো লাভ হবে না।’
শিক্ষার্থীদের বিশৃঙ্খলা না করার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘তোমাদের কাছে একটাই অনুরোধ, নতুন সময় এসে অনেক অস্থিরতা গিয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমরা সম্পূর্ণ অভিভাবকহীনতায় পেয়েছি, সেখানে কর্তৃপক্ষও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের স্বল্প সময়ে একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে রেখে যেতে চাই, যাতে ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে এটা নিদর্শন হিসেবে থাকে। তোমাদের কোনো অভিযোগ থাকলে আমাদের কাছে জানিয়ো। তবে আর রাস্তা অবরোধ নয়, বিশৃঙ্খলা নয়। আমরা শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ চাই, যেখানে ছাত্র–শিক্ষকদের মধ্যে সুসম্পর্ক ফিরে আসবে।’
বর্তমানে সাত কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে যে শিক্ষাব্যবস্থা আছে, সেটা যেন কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান শিক্ষা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের অনুরোধ করব, এই অন্তর্বর্তী সময়ে তোমাদের অসুবিধাগুলো দূর করার জন্য যেন তারা সচেষ্ট হয়।’
অনুষ্ঠানে মূল আলোচক ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ইলিয়াস অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম।