ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, মেয়র গেলেন বিদেশ ভ্রমণে
শুধু ঢাকাতেই গত ১৬ দিনে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৪২ জন। একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৩ হাজার। এই দুটি তথ্যই বলে দিচ্ছে ঢাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি কতটা খারাপের দিকে যাচ্ছে। ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। দক্ষিণ সিটির আওতাধীন পূর্ব জুরাইন এলাকার বাসিন্দারা মশকনিধন কার্যক্রমে গাফিলতির অভিযোগ এনে সমাবেশ পর্যন্ত করেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার দুই মেয়রের আরও কার্যকর ভূমিকা চায় বিভিন্ন সংগঠন। মশকনিধন কার্যক্রমে সামনে থেকে তাঁদের নেতৃত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির মধ্যেই ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ১৭ দিনের জন্য গত বৃহস্পতিবার সপরিবার বিদেশ সফরে গেছেন। এই সময়ে তাঁর বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন।
মেয়রের এই ভ্রমণ নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৪ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ১৭ দিন পারিবারিক ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যুক্তরাজ্য, স্পেন, ডেনমার্ক ও সেনজেনভুক্ত অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করবেন। এই ভ্রমণের বিমান ভাড়া, থাকা-খাওয়া এবং যাবতীয় ব্যয়ভার মেয়র ব্যক্তিগতভাবে বহন করবেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে ভ্রমণের ব্যয় বহন করা হবে না।
ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে জানতে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের মুঠোফোনে (ভাইবারে) প্রথম আলোর পক্ষ থেকে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। তবে তিনি কোনো জবাব দেননি। পরে সিটি করপোরেশনের মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছেরের কাছে একই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
মেয়রের বিদেশযাত্রার পরের দিন গত শুক্রবার বিকেলে ‘মশকনিধনে গাফিলতির প্রতিবাদে এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে’ সমাবেশ করেছেন পূর্ব জুরাইন এলাকার বাসিন্দারা। এতে শতাধিক স্থানীয় মানুষ অংশ নেন। সমাবেশে অভিযোগ করা হয়, সিটি করপোরেশনের দায়িত্বহীনতার কারণে ডেঙ্গু মহামারির আকার ধারণ করেছে।
‘আমরা জুরাইনবাসী ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে চাই’ এই ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে বলা হয়, পূর্ব জুরাইনের প্রতিটি ঘরেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। রক্ত দিতে দিতে এলাকার তরুণেরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এ এলাকায় অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
সমাবেশে পূর্ব জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মেয়র ইউরোপে ঘুরতে গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসের প্রথম ১৬ দিনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ১২ হাজার ৯০৬ জন বাসিন্দা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। একই সময়ে মারা গেছেন ৪২ জন।
আর রাজধানীর হাসপাতালগুলোর মধ্যে শুধু মুগদা হাসপাতালে গত ১৬ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৮১৩ জন। একই সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৯৮ জন এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড হাসপাতাল) ভর্তি হয়েছেন ৬৩৪ জন। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার একাধিক জরিপে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর ঢাকা শহরে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা বেশি।
ঙ্গু পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে মেয়রের বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত স্থপতি ইকবাল হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়র পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভ্রমণে যেতেই পারেন। কিন্তু আমরা তো এখন ডেঙ্গু মহামারিতে পড়লাম। এই পরিস্থিতি যদি মেয়র অনুভব না করেন, তাহলে প্রতিশ্রুতির সঙ্গে প্রাপ্তিটা কম হয়।’
ইকবাল হাবিব বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে মেয়র নিজে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে মশকনিধনে এবং ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে গণ-আন্দোলন গড়ে তুলবেন বলে মানুষের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সংকটকালে তাঁর এই ভ্রমণ দুঃখবোধ জাগিয়ে দেয়।’