পবিত্র রমজান উপলক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সুলভ মূল্যে মাংস, দুধ ও ডিম বিক্রির চতুর্থ দিন ছিল আজ বুধবার। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় সুলভ মূল্যের পণ্যের ভ্রাম্যমাণ ফ্রিজিং ভ্যান পৌঁছার কথা ছিল সকাল ১০টায়। কিন্তু পৌঁছায় ৪০ মিনিট দেরিতে ১০টা ৪০ মিনিটে। আর প্রতিনিধিরা বিক্রি শুরু করেন পৌনে ১১টার দিকে। সোয়া এক ঘণ্টার মধ্যেই গরুর মাংস শেষ হয়ে যায়।
পণ্যবাহী গাড়ি দেরিতে পৌঁছানোয় অপেক্ষমাণ ক্রেতারা বিরক্তি প্রকাশ করেন। ৩২ জন নারী-পুরুষ দুধ, ডিম ও মাংসের জন্য সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৯ পুরুষ ও ১৩ নারী ছিলেন। অনেকে দেরি দেখে পণ্য না কিনে চলে যান।
গাড়ি দেরির কারণ সম্পর্কে সকাল ১০টা ১১ মিনিটের দিকে কথা হয় মোহাম্মদপুরের গাড়ির দায়িত্বে থাকা ক্যাশিয়ার হাসিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, পণ্যগুলো বুঝে পেতে একটু দেরি হয়েছে। গাড়িতে পণ্য তোলা হচ্ছে। ১০ মিনিটের মধ্যে রওনা হবে।
গাড়ি পৌঁছানোর পর সারিতে দাঁড়িয়ে নারীদের মধ্যে প্রথম পণ্য কেনেন পিসি কালচার হাউজিংয়ের গৃহিণী নাছিমা খানম। তিনি জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি বিক্রয়ের স্থানে পৌঁছান। আর পণ্য কেনেন ১০টা ৪৮ মিনিটে।
নাছিমা খানম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক ঘণ্টার বেশি সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম। শুনেছি মাংসের মান ভালো, বাজারের তুলনায় কিছুটা কমে কেনা যায়। তাই কষ্ট হলেও অপেক্ষা করেছি। কিন্তু সময়মতো বিক্রি শুরু করতে পারলে ভালো।’
রমজান উপলক্ষে গরু, খাসি ও মুরগির মাংস, ডিম ও দুধ বিক্রি করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ এক কেজি করে গরু ও খাসি, দুই কেজি ড্রেসড ব্রয়লার, দুই লিটার দুধ, দুই ডজন ডিম কিনতে পারবেন।
মোহাম্মদপুরের ভ্রাম্যমাণ ওই বিক্রয়কেন্দ্রে আজ গরুর মাংস ১২০ কেজি, খাসির মাংস ১৫ কেজি, মুরগির মাংস ১৩০ কেজি, দুধ ২০০ লিটার এবং ডিম ১ হাজার ৮০০টি বা ১৫০ ডজন নেওয়া হয়। এর মধ্যে গরুর মাংসের কেজি ৬০০ টাকা, খাসি ৯০০ টাকা, মুরগি ২৫০ টাকা কেজি দরে এবং দুধ ৮০ টাকা লিটার ও ডিম ১১০ টাকা ডজনে বিক্রি করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ গাড়ি থেকে এক কেজি করে গরু, খাসি ও ড্রেসড ব্রয়লার মুরগির মাংস এবং দুই লিটার দুধ, এক ডজন ডিম কেনেন আদাবরের বাসিন্দা কুতুব উদ্দিন। আর মেয়ের বাসার জন্য শুধু এক কেজি গরুর মাংস কেনেন তিনি। নিজের ও মেয়ের জন্য সব মিলিয়ে ২ হাজার ৫২০ টাকার খাদ্যপণ্য কিনেছেন।
কুতুব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরও সুলভ মূল্যে একাধিকবার মাংস ও অন্যান্য পণ্য কিনেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এ বছরও কিনতে এসেছি। মাংস মোটামুটি ঠিক আছে, তবে চর্বির পরিমাণ বাজার থেকে তুলনামূলক বেশি।’
সরেজমিন দেখা যায়, বিক্রির শুরুতে নারী ও পুরুষ মিলিয়ে সারিতে ৩২ জন ছিলেন। বিক্রি শুরু হতেই সারি দীর্ঘ হতে থাকে। ১০ মিনিটের মধ্যেই পুরুষ সারিতে মানুষ অর্ধশতাধিক ছাড়িয়ে যায়। তবে নারীদের সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। পুরুষদের মধ্যে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি। নিম্ন আয়ের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষকেও পণ্য কিনতে সারিতে দাঁড়াতে দেখা গেছে। তাঁদের কেউ কেউ আবার সংবাদ সংগ্রহে কর্মরত সাংবাদিকদের ছবি না তোলার অনুরোধ করেন।
কৃষি মার্কেটে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গিয়েছিলেন শিপন মিয়া। সেখান থেকে ফেরার পথে পণ্য বিক্রির গাড়ি দেখে লাইনে দাঁড়ান তিনি। এলাকা থেকে ভাইকে ফোন করে টাকা আনতে বলেন। শিপন যখন সারিতে আটজনের পেছনে, তখন টাকা নিয়ে তাঁর ভাই পৌঁছান। পরে শিপন এক কেজি গরুর মাংস, দুই কেজি মুরগি, এক লিটার দুধ ও এক ডজন ডিম কেনেন।
শিপন মিয়া বলেন, ‘আমার হাতে টাকা ছিল না। আমি তো শুধু কিছু জিনিস কিনতে টাকা নিয়ে বের হইছি। পরে ফোন করে ভাইকে টাকা আনতে বলি।’
দুপুর ১২টার দিকে ১২০ কেজি গরুর মাংস বিক্রি শেষ হয়। খাসির মাংস শেষ হয় তারও আগে। সোয়া ১২টার পরে শুধু মুরগি, দুধ ও ডিম বিক্রি করা হয়। তখনো ক্রেতাদের সারি কিছুটা ছিল।
বিক্রি কার্যক্রম তদারক করতে কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি মনিটরিং টিম করা হয়েছে। মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টার এলাকার দায়িত্বে ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (সম্প্রসারণ) শাহিনুর আলম। দেরির বিষয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি আমাদের রুটিন কাজ নয়। এটা একটা বিশাল কর্মযজ্ঞ। সবকিছু প্রস্তুত করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। ধীরে ধীরে সবকিছু সময়ের মধ্যে হবে।’
শাহিনুর আরও বলেন, ‘মানুষের মধ্যে প্রচুর আগ্রহ দেখছি। আমরা চাহিদার পুরোপুরি পূরণ করতে না পারলেও মানুষ প্রশংসা করছে। বরাদ্দ আরও বাড়ানো গেলে ভালো হতো। এতে বাজারে এর আরও বেশি প্রভাব পড়ত।’
রাজধানীর মোট ৩০টি স্থানে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্র ২৫টি এবং স্থায়ী বাজার ৫টি।