শেষ হলো পাওয়া না পাওয়ার বইমেলা
ফাগুনের হাওয়া উড়িয়ে, শুকনা পাতা ঝরিয়ে নিভে গেল মেলার মাঠের ভেতরের আলোক বাতিগুলো। শেষ হলো মাসজুড়ে চলা বই নিয়ে উৎসব।
বিচিত্র বিষয়ে সৃজনশীল বইয়ের আয়োজন নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল অমর একুশে বইমেলা-২০২৩। এবারের মেলায় নতুন বই এসেছে মোট ৩ হাজার ৭৩০টি। গত বছরও এ সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে তিন হাজার।
তবে এবার বিক্রি নিয়ে কিছুটা মন খারাপ আছে লেখক–প্রকাশকদের। বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্যমতে, এবারের মেলায় ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪৭ কোটি টাকার বই। ২০২২ সালের বইমেলায় বিক্রির পরিমাণ ছিল সাড়ে ৫২ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন খান বলছিলেন, কাগজের দাম বাড়ায় বইয়েরও দাম কিছুটা বেড়েছে। তবু বই যেমন বিক্রি হয়েছে, এতে সন্তুষ্ট তাঁরা।
মেলায় বইয়ের বিক্রি যেমনই হোক, মাসজুড়ে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাঠক-লেখকদের মিলনমেলা যে জমেছিল, তা মূল্যবান। আর সে কথাই উঠে এল আনুষ্ঠানিক সমাপনী পর্বেও।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার সমাপনী ঘোষণা করা হয় বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে। উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, সচিব এ এইচ এম লোকমান, মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, বই পড়ার মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মের তরুণদের মধ্যে মানবিক দর্শন জাগ্রত হবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।
বাংলা একাডেমি আয়োজিত এ বছরের বইমেলার প্রতিপাদ্য ছিল ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।’ বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্যমতে, এবারের মেলায় এসেছেন ৬৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪৬৩ জন মানুষ।
মাঘের কনকনে বাতাসে শুরু হয়েছিল মেলা। পয়লা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি আর ছুটির দিনগুলোতে মেলার মাঠ ছিল ‘তিল ঠাঁই আর নাহিরে’ অবস্থায়। ফাল্গুনের মাঝে যখন শেষ হলো, তখন অনেকেরই মন খারাপ। বই গুছিয়ে, টেবিলের কাপড় গুটিয়ে হিসাবের খাতা ব্যাগে নিতে নিতে স্টলের কর্মচারীরা বলছিলেন, মায়া লাগছে। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলেছে কবি-সাহিত্যিক, লেখক-প্রকাশকদের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের আড্ডা। মঙ্গলবার শেষ দিনের মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়েছেন অনেক মানুষ।
পাঠক সমাবেশের স্বত্বাধিকারী সাহিদুল ইসলাম অবশ্য বলছিলেন, ‘বিষয়, বৈচিত্র্য, পরিকল্পনা মিলিয়েই প্রকাশনার সাফল্য আসে। পাঠক অনেক আছে। প্রকাশকদের তাদের স্টাডি করা দরকার।’
গতকাল সমাপনী অনুষ্ঠানে দেওয়া হয় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২, কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ এবং অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ উপলক্ষে বিভিন্ন গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার।
মেলার শেষকালে আতশবাজি ফুটিয়ে আর লেজার শো দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উদ্যাপিত হলো এক মাসের এই যজ্ঞের সমাপনী বার্তা। প্রথমা প্রকাশনে দাঁড়িয়ে এর আগে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, সরকারের আরও বেশি বিনিয়োগ করা উচিত বইমেলার জন্য। তাঁর কথায় উঠে এল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো জায়গাটির ঐতিহাসিক গুরুত্বের প্রসঙ্গও।
সেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আর বাংলা একাডেমির মাঠ যেন এক মাসের উজ্জ্বল স্মৃতি নিয়ে হঠাৎ শান্ত হয়ে গেল গতকাল রাতে।