আজিমপুরে দিবাযত্ন কেন্দ্রে শিশুর মৃত্যু
ঢাকার আজিমপুরে একটি সরকারি দিবাযত্ন কেন্দ্রে (ডে–কেয়ার সেন্টার) ১১ মাস বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়েছে। উম্মে আলিফা নামের শিশুটির মা ইসরাত আরা নগরীর আজিমপুরে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স। আর বাবা হাকিবুল হাসান তালুকদার ওরফে আল আমিন বসুন্ধরায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী।
হাকিবুল-ইসরাত দম্পতি দুই শিশুসন্তান নিয়ে লালবাগের কাজী রিয়াজ উদ্দিন সড়কে থাকেন। ইসরাত আরা প্রথম আলোকে বলেন, স্বামী-স্ত্রী চাকরি করার কারণে তাঁদের দুই শিশুকে (২ বছর ৩ মাস বয়সী আল আরাবিয়া ও ১১ মাস বয়সী আলিফা) আজিমপুরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যাম্পাস–সংলগ্ন ‘নিম্নমধ্যবিত্ত’ ডে-কেয়ার সেন্টারে রেখে কর্মস্থলে যান। বিকেলে কর্মস্থল থেকে ফেরার সময় সন্তানদের নিয়ে বাসায় ফেরেন। প্রতিদিনের মতো আজ বুধবার সকালে দুই সন্তানকে সেখানে রেখে কাজে যান তাঁরা।
দুপুরের দিকে ওই ডে–কেয়ার সেন্টার থেকে ফোন করে আলিফা অসুস্থ হওয়ার কথা জানায়। খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, আলিফাকে আজিমপুর ম্যাটার্নিটিতে (আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান) নেওয়া হয়েছে। সেখানে গেলে জানতে পারেন, বেলা সোয়া একটার দিকে ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আলিফাকে মৃত ঘোষণ করেছেন। পরে তিনি আলিফাকে নিয়ে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। বেলা পৌনে দুইটার দিকে সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসকেরাও আলিফাকে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে মৃত বলে জানান।
দুই সন্তানকে ডে–কেয়ার সেন্টারে রাখার জন্য মাসে এক হাজার টাকা দিচ্ছিলেন বলে জানান ইসরাত আরা। সন্তানের মৃত্যুর জন্য ওই ডে–কেয়ার সেন্টার কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে এই মা বলেন, ‘সুস্থ আলিফাকে রেখে গেলাম, ফিরে পেলাম মৃত অবস্থায়। এর বিচার চাই।’
শিশুটির মৃত্যুর পরপরই ডে–কেয়ার সেন্টার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কেটে পড়েন। এর আগেও প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শিশুদের প্রতি অবহেলার অভিযোগ করেছিলেন বলে জানান ইসরাত আরা। তিনি বলেন, ‘গত মাসে আমার ছেলে আরাবিয়ার পিঠে কামড়ের দাগ ছিল। কীভাবে ওই ঘটনা ঘটেছে, তা জানতে চেয়েছিলাম। পরে তারা এ ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেনি।’
সন্তানের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাবা হাকিবুল হাসান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান। তিনি অভিযোগ করেন, আলিফা কীভাবে মারা গেছে, ডে–কেয়ার সেন্টার কর্তৃপক্ষ সেই জবাব দিতে পারেনি। তিনি জানান, আলিফার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ডে–কেয়ার সেন্টারের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, শিশুটি বালতিভর্তি পানিতে পড়ে মারা গেছে। শিশুটিকে উদ্ধার করার সময় তার মাথা নিচে এবং পা ওপরের দিকে ছিল।
এই মৃত্যুর পেছনে ডে–কেয়ার সেন্টার পরিচালনাকারীদের গাফিলতি রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।