ঢাকার দুই স্থানে সড়ক অবরোধ, যানজটে ভোগান্তি

ভাতা বাড়ানোর দাবিতে বিএসএমএমইউ ও বিসিপিএসের অধিভুক্ত পোস্টগ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকেরা শাহবাগ মোড় এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেনছবি : সাজিদ হোসেন

রাজধানীর পৃথক দুটি এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন ট্রেইনি চিকিৎসক এবং চাকরিচ্যুত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। আজ রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর জাহাঙ্গীর গেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন সশস্ত্র বাহিনীর ওই সদস্যরা। এর ১৫ মিনিট পর দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শাহবাগ মোড় এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন ট্রেইনি চিকিৎসকেরা।

ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এই দুই জায়গার সড়কে অবরোধ থাকায় তেজগাঁও ও রমনার বিভিন্ন এলাকায় যানজট দেখা দেয়। বিশেষ করে মহাখালী, বনানী, তেজগাঁও, বিজয় সরণি এবং শাহবাগ, রমনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যানজট তীব্র আকার নেয়। প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধের পর রাস্তা থেকে সরে যান চাকরিচ্যুত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। তবে তখনো শাহবাগ মোড়ে অবরোধ চলছিল।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) তানিয়া সুলতানা বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনকারীরা জাহাঙ্গীর গেট থেকে চলে যাওয়ার পর যান চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক হয়। তবে শাহবাগ মোড় বন্ধ থাকায় এদিক থেকে (বিজয় সরণি) শাহবাগের দিকে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি রয়েছে।

বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়েও শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করছিলেন ট্রেইনি চিকিৎসকেরা। শাহবাগ থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসআই মো. মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসকেরা এখনো সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। শাহবাগ ও আশপাশ এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়েছে।

পুলিশ ডাইভারশন দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে বলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম শাহাবুদ্দিন শাহিন আগেই জানিয়েছিলেন।

ভাতা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার দাবিতে শাহবাগে এই অবরোধ করছেন বিএসএমএমইউ ও বিসিপিএসের অধিভুক্ত পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি চিকিৎসকেরা। গত মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবিধি অনুবিভাগের উপসচিব সৈয়দ আলী বিন হাসানের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এফসিপিএস প্রথম পর্ব পাস করা প্রশিক্ষণার্থীদের মাসিক পারিতোষিক ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা করা হয়। এর আগে গত রোববারও (২২ ডিসেম্বর) এই চিকিৎসকেরা তাঁদের ভাতা ৫০ হাজার টাকা করার দাবিতে শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছিলেন।

আজ দুপুর থেকে শাহবাগে এই অবরোধের কারণে আশপাশের এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। বিকেল পৌনে চারটার দিকে শ্যামলী থেকে মোটরসাইকেলে করে কারওয়ান বাজারে আসছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মেহেদী হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খামারবাড়ি থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত পুরো পথে যানজট পেয়েছেন তিনি। এই পথ পাড়ি দিতে তাঁর প্রায় ২৫ মিনিট সময় লেগেছে। অথচ অন্যদিন সাত মিনিটের মতো লাগে। যানবাহন খুবই ধীরগতিতে এগোচ্ছে।

তিন দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে চাকরিচ্যুত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্ল্যাটফর্ম। জাহাঙ্গীর গেট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীর গেটে অবরোধ যে কারণে

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘শৃঙ্খলাপরিপন্থী’ বিভিন্ন কাজে জড়ানোর অভিযোগে চাকরিচ্যুত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্ল্যাটফর্ম ‘সহযোদ্ধা’-এর ব্যানারে বিক্ষোভকারীরা সকাল আটটা থেকে জাহাঙ্গীর গেটের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে তাঁরা সড়কে বসে পড়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁদের তিন দফা দাবি হলো চাকরিচ্যুতির সময় থেকে এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ বেতন, ভাতা ও অন্য সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরি পুনর্বহাল করতে হবে; যদি সশস্ত্র বাহিনীর কোনো সদস্যের চাকরি পুনর্বহাল করা সম্ভব না হয়, তাহলে তাঁদের সরকারি সব সুযোগ-সুবিধাসহ সম্পূর্ণ পেনশনের আওতাভুক্ত করতে হবে এবং যেসব আইনি কাঠামো ও ‘একতরফা’ বিচারব্যবস্থার প্রয়োগে শত শত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, সেই বিচারব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে।

বিক্ষোভের ফলে জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালী, বনানী, তেজগাঁও, বিজয় সরণিসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়া বিদেশগামী অনেক যাত্রীও এ সময় যানজটে আটকা পড়েন।

সশস্ত্র বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিক্ষোভকারী ব্যক্তিদের একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ‘সহযোদ্ধার’ প্রধান সমন্বয়ক মো. নাঈমুল ইসলাম বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে একটি পর্ষদ গঠন করে দাবিগুলোর বিষয়ে আলাপ-আলোচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা সড়কের এক পাশে সরে যান।

আরও পড়ুন