নতুন ভবন হবে ড্যাপ মেনে

ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধন করে নতুন ড্যাপের সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হবে।

  • ঢাকা উত্তর সিটির গুলশান ও বারিধারা এলাকায় সবচেয়ে উঁচু ভবন নির্মাণ করা যাবে।

  • ঢাকা দক্ষিণ সিটির শাহবাগ, বাংলামোটর, পরীবাগ ও ধানমন্ডি এলাকায় উঁচু ভবন নির্মাণ করা যাবে।

ফাইল ছবি

বর্তমান ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, উত্তরায় তিন কাঠার একটি প্লটে সর্বোচ্চ সাততলা পর্যন্ত আবাসিক ভবন নির্মাণ করা যায়। কিন্তু নতুন করে অনুমোদন দেওয়া ঢাকা মহানগরের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) অনুযায়ী, উত্তরায় তিন কাঠার জমিতে এখন সর্বোচ্চ ছয়তলা ভবন নির্মাণ করা যাবে।

বিধিমালা ও ড্যাপে ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিও’ বা এফএআর-এর মানের তারতম্যেই কারণে এমন হয়েছে। ভবনের আয়তন ও উচ্চতা নির্ধারণ করার সূচক হচ্ছে এফএআর।

নতুন ড্যাপ কার্যকর হলেও ২০০৮ সালে করা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা এখনো বহাল রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনটি বিবেচনায় নিতে হবে, তা নিয়ে ভবনমালিকদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। ড্যাপ বাস্তবায়নের মূল দায়িত্বে থাকা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তাদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে এত দিন অস্পষ্টতা ছিল।

রাজউকের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে, নতুন ড্যাপের মাধ্যমেই রাজউক এলাকার ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হবে। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বর্তমান ইমারত নির্মাণ বিধিমালা (২০০৮ সালের) সংশোধন করে নতুন ড্যাপের সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হবে।

আরও পড়ুন

ড্যাপ মূলত একটি মহাপরিকল্পনা। ১৯৫৩ সালের ‘টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্টে’র আওতায় এই মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। অন্যদিকে ইমারত নির্মাণ বিধিমালাটি হয়েছে ১৯৫২ সালের ‘বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন অ্যাক্ট’ অনুযায়ী। এই দুই আইনের মাধ্যমেই মূলত রাজউক পরিচালিত হয়।

রাজউকের আওতাধীন এলাকায় ভবন নির্মাণ করতে হলে দুই ধরনের অনুমোদন নিতে হয়। প্রথমত, ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র। দ্বিতীয়ত, নির্মাণ অনুমোদন। ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র দেওয়া হয় ড্যাপ অনুসরণ করে। অন্যদিকে নির্মাণ অনুমোদন দেওয়া হয় ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসারে। নতুন ড্যাপ হয়েছে কিন্তু নতুন কোনো ইমারত নির্মাণ বিধিমালা হয়নি। যে কারণে রাজউকের অনেক কর্মকর্তা ধারণা করছেন, ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র নতুন ড্যাপ অনুযায়ী ও নির্মাণ অনুমোদন বিদ্যমান ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী দেওয়া হবে।

এমন পরিস্থিতিতে গত সোমবার রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একটি নোটিশ দেওয়া হয়। রাজউকের নগর-পরিকল্পনাবিদ মাহফুজা আক্তারের সই করা নোটিশে বলা হয়েছে, নতুন পাস হওয়া ড্যাপের মাধ্যমেই রাজউকের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র ও ভবনের উচ্চতা নির্ধারণসংক্রান্ত কাজ করতে হবে।

এই নির্দেশনার মাধ্যমে রাজউকের আওতাধীন এলাকায় ভবন নির্মাণসংক্রান্ত বিষয়ে বিভ্রান্তি দূরের পাশাপাশি ভবনের উচ্চতাও কমল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

আরও পড়ুন

কমল এফএআরের মান

বিদ্যমান ইমরাত নির্মাণ বিধিমালায় প্লটের (জমি) পাশে রাস্তার প্রশস্ততা অনুযায়ী, এফএআরের মান নির্ধারণ করা হয়। ছয় মিটার চওড়া রাস্তার পাশে আবাসিক বাড়ি ও হোটেল নির্মাণের ক্ষেত্রে এফএআর হবে এক ধরনের। অন্যদিকে কোনো প্লটের পাশের রাস্তার প্রশস্ততা যদি ১৮ মিটারের বেশি হয়, তাহলে সেই প্লটে যত খুশি তত উঁচু ভবন নির্মাণের সুযোগ ছিল (বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বিধিনিষেধ মেনে)। নতুন ড্যাপে সেই সুযোগ আর রাখা হয়নি। তবে ব্লকভিত্তিক (একসঙ্গে কয়েকটি ছোট প্লট একত্র করে) উন্নয়নসহ কিছু ক্ষেত্রে রাজউকের অনুমতি সাপেক্ষে ভবনের উচ্চতা বাড়ানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

নতুন ড্যাপ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে গুলশান ও বারিধারা এলাকায় সবচেয়ে উঁচু আবাসিক ভবন নির্মাণ করা যাবে। অন্যদিকে মিরপুর ১১, বাউনিয়া, পাইকপাড়া, কল্যাণপুর, জোয়ারসাহারা, কুড়িল, খিলক্ষেত, কালাচাঁদপুর, কড়াইল, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, উলন, নিকেতন, নয়াটোলা, মধুবাগসহ কিছু এলাকায় ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে উচ্চতা কম হবে।

একইভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন শাহবাগ, বাংলামোটর, পরীবাগ ও ধানমন্ডি এলাকায় তুলনামূলকভাবে উঁচু ভবন নির্মাণ করা যাবে। অন্যদিকে গোড়ান, সিপাহীবাগ, মধ্য বাসাবো, আনসারাবাদ, সবুজবাগ, কদমতলা, দক্ষিণগাঁও, মালিবাগ, শান্তিবাগ, শুক্রাবাদ, পশ্চিম রাজাবাজার, জিগাতলাসহ কিছু এলাকায় নতুন ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে উচ্চতা আগের চেয়ে কমবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন প্রথম আলোকে বলেন, বাসযোগ্য নগর গড়তে গেলে কিছু জায়গায় ছাড় দিতেই হবে। ঢাকার বাসযোগ্যতার নিরিখেই এলাকাভিত্তিক এফএআরের মান নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এতে ভবনমালিকেরা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

আগের আবেদনের কী হবে

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত ২২ আগস্ট পর্যন্ত ৯ হাজার ৬৫৬টি ভবনের নির্মাণ অনুমোদন দিয়েছে রাজউক। ২৩ আগস্ট নতুন ড্যাপ পাস হওয়ার আগপর্যন্ত আরও শতাধিক আবেদন জমা পড়ে ছিল।

এসব আবেদনের কী হবে জানতে চাইলে রাজউকের পরিচালক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ-১) মো. মোবারক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ২৩ আগস্ট নতুন ড্যাপের প্রজ্ঞাপন হওয়ার আগপর্যন্ত রাজউকে ভবনের নির্মাণ অনুমোদনসংক্রান্ত যেসব আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলো ২০০৮ সালের বিধিমালা অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা হবে। আর ২৩ আগস্টের পর যেসব আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলো নতুন ড্যাপ অনুসারে নিষ্পত্তি করা হবে।