টাকা ধার করেছিলেন গরুর মাংস কিনতে, পেলেন মুরগি
বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা। কোথাও কোথাও আবার ৮০০ টাকা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সুলভ মূল্যে ভ্যানে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে গরুর মাংস বিক্রি হয় ৬০০ টাকা কেজি দরে। এটি বাজারের তুলনায় ১৫০-১৮০ টাকা কম।
তবে ওই ৬০০ টাকাও পুরোপুরি হাতে ছিল না মিরপুরের টোলারবাগ এলাকার বাসিন্দা রাশিদা বেগমের কাছে। এক স্বজনের কাছ থেকে ২০০ টাকা ধার করে ৬০০ টাকা মিলিয়ে আজ শনিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে গরুর মাংস কেনার জন্য সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। যতক্ষণে তাঁর সুযোগ আসে, তার আগেই বিক্রয়কেন্দ্রের বরাদ্দ করা গরুর মাংস শেষ হয়ে যায়।
গরুর মাংস না পেয়ে রাশিদা বেগম ২৫০ টাকায় এক কেজি মুরগি (ড্রেসড ব্রয়লার) ও ২০০ টাকায় দুই ডজন ডিম এবং ১৬০ টাকায় দুই লিটার দুধ কেনেন। এসব কিনতে রাশিদার মোট ৬১০ টাকা খরচ হয়।
আজ শনিবার সোয়া ১০টার দিকে মিরপুরের টোলারবাগে পাইকপাড়া সরকারি সি-টাইপ কোয়ার্টারের সামনে কথা হয় রাশিদা বেগমের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক দিন হয় গরুর মাংস খাই না। রোজার মধ্যে তাই খাইতে মন চাইল। কিছু টাকা ধার করে তাই লাইনে দাঁড়ালাম। কিন্তু আগেই গরুর মাংস শেষ হয়ে গেছে।’
রাশিদা বেগমের মতো লাইনে দাঁড়ানো অনেকেই আজ গরুর মাংস কিনতে পারেননি। বিক্রি শুরুর পরে এক ঘণ্টা হওয়ার আগেই গরুর মাংস শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরে লাইনে দাঁড়ানো অনেক মানুষ গরুর মাংস না পেয়ে শুধু দুধ ও ডিম কেনেন। কেউ কেউ আবার মুরগির মাংস কেনেন।
রমজান মাসে সুলভ মূল্যে গরু-খাসি-মুরগির মাংস, দুধ ও ডিম বিক্রি করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। আজ শনিবার কল্যাণপুরের ঝিলপাড় এলাকার ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা এসব পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মিরপুরের টোলারবাগ এলাকায় পাইকপাড়া সরকারি সি-টাইপ কোয়ার্টারের সামনে।
বিক্রয় প্রতিনিধি সম্রাট শাহজাহান জানান, ওই বিক্রয় কেন্দ্রের জন্য আজ ১০০ কেজি গরুর মাংস, ১০ কেজি খাসির মাংস, ৫০ কেজি মুরগির মাংস, দুধ ১৫০ লিটার এবং ডিম ১ হাজার ৮০০টি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সকাল ৯টা থেকে ওই জায়গায় বিক্রি শুরু হয়।
শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, এই জায়গায় গরুর চাহিদা অনেক বেশি। এর জন্য মুরগির মাংসের চেয়ে গরুর মাংসই বেশি করে আনা হয়েছিল। তবুও দ্রুত শেষ হয়ে গেছে। লাইনে দাঁড়ানো অনেকেই গরুর মাংস পাননি। লাইনে দাঁড়ানো প্রায় ২০ জন থাকতেই গরুর মাংস শেষ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক সায়রুল ইসলাম। মিরপুর-১ নম্বরের শাহ আলী মাজার এলাকায় তাঁর সিএনজির গ্যারেজ। কল্যাণপুরে যাত্রী নামিয়ে আবার মিরপুর-১ নম্বরের দিকেই ফিরছিলেন তিনি। টোলারবাগে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের ফ্রিজার ভ্যান দেখে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তিনিও গরুর মাংস পাননি বলে জানালেন।
সায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমার তিনজন আগে থেকেই গরুর মাংস শেষ হয়ে যায়। গরুর মাংস পেলে উপকার হতো। বাজারে তো কোনো কিছুর দামই কম না। ঈদের আগে এক কেজি গরুর মাংস থেকে ১৫০-১৮০ টাকা বাঁচাইতে পারাও অনেক।’
এদিকে প্রতি ডজন ডিমে আরও ১০ টাকা কমিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। গতকাল শুক্রবার থেকে প্রতি ডজন ডিম ১০০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি ডজন ডিম ১২০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ ওই বিক্রয়কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা জানান, শুরু থেকে ১১০ টাকায় এক ডজন ডিম বিক্রি করা হতো। দাম কমে যাওয়ায় আরও ১০ টাকা কমানো হয়েছে।