ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র যেসব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেসব বাস্তবায়নের উদ্যোগ ছিল বিচ্ছিন্ন। তাঁদের উদ্যোগ টেকসই হয়নি। ফলে দায়িত্ব গ্রহণের চার বছর পরও জলাবদ্ধতা, মশা, বর্জ্য দূষণ, ফুটপাত বেদখলের মতো সংকট দূর করে নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে পারেনি দুই মেয়রের উদ্যোগ।
‘ঢাকা উত্তর এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদের চার বছর: নাগরিকদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নেতাদের বক্তব্যে এসব বিষয় উঠে এসেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং এই দুই সিটির কাউন্সিলরদের চার বছর পার হতে চলেছে। এই সময়ে তাঁদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আইপিডির পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান অনুষ্ঠানে এক নিবন্ধ তুলে ধরেন।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, নির্বাচনী ইশতেহারে উত্তরের মেয়র একটি সুস্থ, প্রাণবন্ত ও আধুনিক শহর গড়ে তোলার জন্য ৩৮টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অপর দিকে দক্ষিণের মেয়র নির্বাচনী ইশতেহারে ঐতিহ্যবাহী, সুন্দর, প্রাণবন্ত, সুশাসিত ও উন্নত ঢাকা গড়ে তুলতে প্রায় ৫০টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। উভয় মেয়রই ঢাকার ভয়ানক যানজটের উন্নতি, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও মশার উপদ্রব নির্মূলসহ সাহসী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই চার বছরের পথপরিক্রমায় ঢাকার নাগরিকদের প্রত্যাশার বিপরীতে প্রাপ্তি যেমন ছিল, তেমনি অপ্রাপ্তিও ছিল।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে খালগুলো দুই সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়। দুই মেয়রই খাল উদ্ধারের ক্ষেত্রে আন্তরিক ছিলেন। প্রথম দিকে তাঁদের খাল উদ্ধার ও এর ময়লা পরিষ্কারে যে গতি ছিল, তা পরে কমে গেছে। তা ছাড়া খাল উদ্ধার ও ময়লা পরিষ্কারের এই উদ্যোগ টেকসই ছিল না। ঢাকার খালগুলোর মধ্যে আন্তসংযোগ তৈরির পরিকল্পনা হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে খালগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। কখনো কখনো দখলমুক্ত করা হয়েছে। যার কারণে খালগুলো আবার ময়লায় পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ফলে সম্প্রতি অল্প সময়ের ভারী বৃষ্টিতে ঢাকায় জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি দেখা গেছে।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণে সফলতা থাকলেও সার্বিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন হয়নি বলেও অনুষ্ঠানে মত দিয়েছেন বক্তারা। দুই সিটির ময়লা ফেলার স্থান নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অনেক সময় ময়লা এলাকাবাসীকে বিপন্ন করে তোলে। আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য পৃথক্করণ আধুনিক হয়নি। গুলশান-বনানীর মতো এলাকার বাসিন্দারাও পয়োবর্জ্য খালে ফেলছে। পয়োবর্জ্যের কারণে খালগুলো মারা যাচ্ছে।
মশা মারার বড় প্রতিশ্রুতি থাকলেও ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছেন। আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, মশা বাড়ছে। বিজ্ঞানসম্মত জৈবিক পদ্ধতির মাধ্যমে যেভাবে মশকনিধন কার্যক্রম হওয়ার কথা, সে কার্যক্রম সেই অর্থে সমন্বিত ছিল না। কিছু বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ ছিল। বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ দিয়ে মশকের এত বড় সমস্যা মোকাবিলা করা যায়নি।
দুই মেয়রের ফুটপাত দখলমুক্ত করার ব্যাপারে উদ্যোগ থাকলেও তা কাজে আসেনি উল্লেখ করে আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, দখলমুক্ত করা হলেও ফুটপাতে হকার আবার ফিরে এসেছে। যে রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় ফুটপাতগুলো দখল হয়ে যায়, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে মেয়রদের উদ্যোগ নেই। খেলার মাঠ ও পার্কে এখনো সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে পারেননি দুই মেয়র।
অনুষ্ঠানে আইপিডির উপদেষ্টা অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতির মধ্যে অনেক কাজই দুই মেয়রের এখতিয়ারভুক্ত নয়। যেসব কাজ তাঁদের এখতিয়ারভুক্ত, সেসব কাজেও সাফল্য নেই। নগরবাসীর ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে, এমন কাজে সফলতা অনেকাংশেই কম বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় নগর-পরিকল্পনাবিদ রাকিবুল হকসহ ঢাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বক্তব্য দেন।