হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে ভাঙা হলো শতবর্ষী স্থাপনা

পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার শতবর্ষী স্থাপনাটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। গত বুধবার ছবিটি তুলেছেন দীপু মালাকার।

হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার শতবর্ষী নান্দনিক একটি স্থাপনায় পড়েছে হাতুড়ির আঘাত। এরই মধ্যে ভবনটির বেশির ভাগ অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন রাজউকের নোটিশের কারণে বন্ধ রয়েছে ভাঙার কাজ। তবে আশঙ্কা রয়েছে, যেকোনো সময় ভেঙে ফেলা হতে পারে ভবনটির অবশিষ্ট অংশও।

ভবনটি দীননাথ সেন রোডে সাধনা ঔষধালয়ের কাছাকাছি অবস্থিত। নির্মাণকাল ১৮৯৮ সাল। চলতি মাসে ভেঙে ফেলা হয়েছে ভবনটির নকশা করা কারুকার্যখচিত ছাদ। একতলা বাড়িটিতে নিও ক্লাসিক্যাল রীতিতে নির্মিত পাঁচটি খিলান ছিল, এর মধ্যে তিনটির অভ্যন্তরের অলংকৃত অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে।‌ এ ঘটনায় পুরান ঢাকার ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করা সংগঠন আরবান স্টাডি গ্রুপ (ইউএসজি) স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে।

ইউএসজি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম প্রথম আলোকে আজ রোববার বলেন, এ মাসের ২১ অক্টোবর নান্দনিক এই স্থাপনা ভাঙার খবর পেয়ে গেন্ডারিয়া থানায় জানানো হয়। এরও আগে দুই সপ্তাহ ধরে চলছিল ভবন ভাঙার কাজ। নকশা করা ছাদটি ইচ্ছা করে আগে ভাঙা হয়েছে যাতে বোঝা না যায়। এ নিয়ে গেন্ডারিয়া থানায় জিডি করার পরও ভাঙার কাজ থামায়নি। এরপর চতুর্থ দিন এসে রাজউক একটি নোটিশ দেয়। এর ফলে আপাতত ভবনটি ভাঙার কাজ বন্ধ আছে। তবে ক্ষতি যা হওয়ার, তা হয়ে গেছে। আবারও যেকোনো সময় ভাঙার কাজ শুরু হতে পারে।

এদিকে ২২ অক্টোবর দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভবন ভাঙা চলছে। তখন শুধু মেঝে আর ভবনে দেয়ালের নকশা করা কিছু কিছু অংশ অক্ষত ছিল। এ ছাড়া বাকি সবই ভাঙা হয়ে গেছে।

ভেঙে ফেলা হয়েছে ভবনটির নকশা করা কারুকার্যখচিত ছাদ। গত বুধবার ছবিটি তুলেছেন দীপু মালাকার

গত সোমবার গেন্ডারিয়া থানায় ইউএসজির পক্ষ থেকে করা সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ভবনটি এখনো যে অবস্থায় রয়েছে, নকশাগুলো সংরক্ষণ ও ছাদ পুনর্নির্মাণ করে সংস্কার করা সম্ভব। তবে তার জন্য যেটা প্রথমেই দরকার হবে, তা হলো ভবনটিকে সুরক্ষিত করা।

এই ডায়েরিতে আরও উল্লেখ করা হয়, নিওক্ল্যাসিক্যাল স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত একতলা ভবনটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৬ ফুট এবং প্রস্থ প্রায় ৩০ ফুট। ভবনটি প্রায় এক একর জমির ওপর অবস্থিত। প্রায় আড়াই ফুট উঁচু বেদির ওপর অবস্থিত ভবনটির দক্ষিণ ও পূর্বদিকের অবয়ব দুটি নিওক্লাসিক্যাল স্থাপত্যরীতি অনুযায়ী করিনথিয়ান ক্যাপিটাল যুক্ত সারিবদ্ধ কলাম ও অর্ধবৃত্তাকার খিলান দিয়ে অলংকৃত।

‘সেভ দ্য হেরিটেজ’ বাংলাদেশের সূত্রে জানা গেছে, ভবনটি ১৮৯৮ সালে নির্মাণ করেছিলেন মানিকগঞ্জের মত্ত গ্রামের তারক বন্ধু মিত্র। তিনি পেশায় স্কুল পরিদর্শক ছিলেন। ২০১৫ সালে ‘রিনা ব্রাউন’ নামে একটি অসাধারণ চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। সেখানে ভবনটি অত্যন্ত নান্দনিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

২০১৮ সালে আরবান স্টাডি গ্রুপ ২ হাজার ২০০টি বাড়িকে প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ উল্লেখ করে উচ্চ আদালতে রিট করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে এসব বাড়ি অক্ষত রেখে সেগুলোর প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য নির্ণয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মাঠপর্যায়ে জরিপ করে সেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল ও নিষ্পত্তির আগে এসব স্থাপনায় কোনো ধরনের পরিবর্তন করা যাবে না বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট।