দিনভর নানা আয়োজনে জমজমাট সায়েন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল

গ্যেটে ইনস্টিটিউট ও বিজ্ঞানচিন্তা আয়োজিত বিজ্ঞান কুইজের বিজয়ীদের সঙ্গে অতিথিরা। শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডির ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে সায়েন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী পর্বেছবি: গ্যেটে ইনস্টিটিউট

সারা দেশের শিক্ষার্থীরা সকাল ৯টার মধ্যেই হাজির। ছোট-বড় সব বয়সীরা প্রতীক্ষায়। সকাল সোয়া ১০টায় শুরু হলো লিখিত কুইজ। কুইজ শেষ হতেই স্কুলের নওয়াব আলী অডিটরিয়ামে একত্র হলো সবাই। পরবর্তী পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে চলছে অপেক্ষা।

আজ শনিবার এই চিত্র দেখা গেল রাজধানীর ধানমন্ডির ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। এভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা ওঠে সায়েন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৪ বাংলাদেশের। ষষ্ঠবারের মতো বাংলাদেশে উদ্‌যাপিত হচ্ছে এই ফেস্টিভ্যাল। গ্যেটে ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, এর সহযোগী স্কুল ও প্রতিষ্ঠান এবং বিজ্ঞানচিন্তা যৌথ উদ্যোগে এ উৎসবের আয়োজন করেছে। এ উৎসবের অংশ হিসেবে আয়োজিত হয়েছে ‘সায়েন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৪ বিজ্ঞান কুইজ’। এর চূড়ান্ত পর্ব ও সমাপনী অনুষ্ঠানও আয়োজিত হয়েছে আজ।

দ্বিতীয় পর্ব থেকে অনুষ্ঠিত হয় মৌখিক কুইজ। দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেয় দুই ক্যাটাগরির সেরা ১০ জন করে মোট ২০ জন। তুমুল উত্তেজনার মধ্য দিয়ে এই নকআউট পর্বে সেরা ৩ জন করে ৬ জন নির্বাচন করা হয়। তাদের মধ্য থেকে তৃতীয় পর্বে প্রতি ক্যাটাগরির সেরাদের নির্বাচন করা হয়।

শুধু পরীক্ষাই নয়, কুইজের ফাঁকে ফাঁকে শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল বিশেষ আয়োজন। জাদুশিল্পী রাজীব বসাক ও পাপেট শো ‘ভুলোস্টাইন’ নিয়ে হাজির হন শুভঙ্কর দাস শুভ। তাঁদের পরিবেশনায় শিক্ষার্থীরা মুগ্ধ হয়।

ওদিকে প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার মাহমুদা কবির শাওন, বিজ্ঞানবক্তা আসিফ এবং বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদনা দলের সদস্য শিবলী বিন সারওয়ার মঞ্চে হাজির হন। তাঁদের দিকে কঠিন ও কৌতূহলোদ্দীপক সব প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে এখনো বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম নিচ্ছে কেন? জিন সম্পাদনা করে ক্যানসার কেন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না? মুগ্ধতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের এসব প্রশ্নের জবাব দেন বিশেষজ্ঞ অতিথিরা। এভাবেই শেষ হয় প্রথম পর্ব।

দুপুরের পর শুরু হয় সায়েন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৪-এর মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। প্রথমে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে জার্মান দূতাবাসের ঢাকার কালচারাল অ্যাটাশে জিল্কে শিমার এবং গ্যেটে ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের পরিচালক ফ্রাঙ্ক ভের্নার।

উদ্বোধনী বক্তব্যে জিল্কে শিমার সবাইকে স্বাগত জানান। ফ্রাঙ্ক বলেন, ‘আজকের পৃথিবীকে বাঁচাতে আমাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার বিজ্ঞান। বিজ্ঞানবিষয়ক এই সচেতনতা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করা যাবে বলে আমরা আশাবাদী। সে জন্যই আমাদের এই আয়োজন।’

এরপর বিজ্ঞানবিষয়ক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখানো হয়। পরের পর্বে আবারও মঞ্চে চলে পাপেট শো ও জাদু। এরপরেই শুরু হয় বিজ্ঞান কুইজের চূড়ান্ত মৌখিক পর্ব। দুই ক্যাটাগরির সেরা ঐশী মনজুর ও মো. ফাহিম দেওয়ান মুখোমুখি হন বিজ্ঞানচর্চায় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে। ফুটবলের চূড়ান্ত মীমাংসা পেনাল্টির মতোই টান টান উত্তেজনায় দম বন্ধ করে অপেক্ষা করেন দর্শকেরা। এ লড়াই জিতে নেন ঐশী মনজুর, সঙ্গে জিতে নেন লাখ টাকার বেশি দামি টেলিস্কোপ!

পুরস্কার বিতরণীর আগে মঞ্চে আসেন বাংলাদেশ ফিজিকস অলিম্পিয়াড দলের কোচ আরশাদ মোমেন, বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড দলের কোচ লাফিফা জামাল এবং কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব।

বক্তব্য শেষে অতিথিরা পুরস্কার তুলে দেন বিজয়ীদের হাতে। সবার হাতে গ্যেটে ইনস্টিটিউটের স্মারকের পাশাপাশি তুলে দেওয়া হয় বিজ্ঞানচিন্তা। এরপর মঞ্চ মাতায় জলের গান। সন্ধ্যায় সংগীতের সুরে সুরে পর্দা নামে বিজ্ঞানের এই আয়োজনের।