গবেষণা ফলাফল: ডেঙ্গু শনাক্তে ‘এনএস১ এলিসা’ পরীক্ষা বেশি নির্ভরযোগ্য
গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু শনাক্ত করতে ‘এনএস১ এলাইজা’ পরীক্ষা তুলনামূলকভাবে বেশি নির্ভরযোগ্য। এই পরীক্ষায় খরচ খুব বেশি নয়। জনস্বাস্থ্যবিদেরা মনে করেন, খরচের কথা না ভেবে সরকারের উচিত দেশের সব এলাকায় এই পরীক্ষা সহজ করে দেওয়া।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার (এনআইএলএমআরসি) মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু শনাক্তকরণে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার তুলনামূলক ফলাফল তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে গবেষক, জনস্বাস্থ্যবিদ, অণুজীববিদ ও সরকারি কর্মকর্তারা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে বলা হয়, গবেষণা ফলাফল দেশের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে হবে।
ডেঙ্গু শনাক্তে দেশে এখন তিন ধরনের পরীক্ষা আছে, যেমন এনএস১ আইসিটি, এনএস১ এলাইজা ও আরটি-পিসিআর। এনআইএলএমআরসির ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান আরিফা আকরাম এই তিন ধরনের পরীক্ষার কার্যকারিতার তুলনা তুলে ধরেন।
আরিফা আকরাম জানান, ওই প্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ করা ৫০০ রোগীর মধ্য থেকে ২০০ নমুনা তিনি গবেষণায় ব্যবহার করেছেন। তাতে তিনি দেখেছেন, তিনটির মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্তকরণে ‘এনএস১ এলাইজা’ পরীক্ষা তুলনামূলকভাবে ভালো ফল দেয়।
গবেষণা ফলাফল উপস্থাপনের সময় আরিফা আকরাম বলেন, এনএস১ আইসিটি পরীক্ষার খরচ ৫০ টাকা, কিন্তু এই পরীক্ষায় অনেক বেশি ‘ফলস নেগেটিভ’ হতে দেখা গেছে। এর অর্থ ডেঙ্গু আছে, কিন্তু পরীক্ষায় তা ধরা পড়ে না। আরটি-পিসিআর পরীক্ষা নির্ভরযোগ্য, কিন্তু প্রতিটি পরীক্ষায় খরচ পড়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা। অন্যদিকে এনএস১ এলাইজা পরীক্ষায় শনাক্ত সঠিক হয়, খরচ চার শ টাকার মতো।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এনএস১ আইসিটি ডেঙ্গু শনাক্তকরণে সারা দেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। অল্প সময়ে পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যায়। চিকিৎসকেরা এই পরীক্ষার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। তবে এই পরীক্ষায় ‘ফলস নেগেটিভ’ অনেক বেশি হয়। ডেঙ্গু থাকার পরও মানুষ জানতে পারেন, তাঁর ডেঙ্গু হয়নি। তিনি চিকিৎসা নেওয়া থেকে বিরত থাকেন এবং পরিস্থিতি খারাপ হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনস্বাস্থ্যবিদ মোহাম্মদ মুশতাক হোসেন বলেন, দেশের সব এলাকায় ‘এনএস১ এলাইজা’ পরীক্ষার ব্যবস্থা সরকারের করা উচিত এবং পরীক্ষায় সরকারের ভর্তুকি দেওয়া উচিত। খরচের কথা সরকারের ভাবা উচিত নয়। আক্রান্ত ব্যক্তির ও মৃত্যুর ক্ষতি বিবেচনায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি বেশি হওয়ার কথা নয়।
তুলনামূলক এই গবেষণা আরও বৃহত্তর পরিসরে হওয়া দরকার বলে একাধিক অংশগ্রহণকারী মন্তব্য করেন। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী আমিনুর রহমান বলেন, যেকোনো পরীক্ষা জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী কি না, তা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনআইএলএমআরসির পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহেদ আলী জিন্নাহ। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক তারেখ মাহবুব খান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ইউসিফ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক (মনিটরিং) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ প্রমুখ।