পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মশালমিছিল
ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনকারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রেহানা ইয়াছমিনের সঙ্গে বৈঠক করলেও সেই আলোচনায় সন্তুষ্ট নন তাঁরা। এ অবস্থায় তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই ঘোষণার অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মশালমিছিল করেছেন তাঁরা।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি রমজান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাটকীয় বৈঠক’ এবং কুমিল্লা বিভাগীয় পলিটেকনিকগুলোর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মশালমিছিল কর্মসূচি আহ্বান করা হয়েছে। এখন আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।
ছয় দফা দাবিতে গতকাল বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। সড়ক আটকে রাখায় তীব্র যানজটে পড়ে দিনভর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। পরে তাঁরা আজ সারা দেশে ‘রেল ব্লকেড’ বা রেলপথ অবরোধ করার ঘোষণা করেন। কিন্তু আজ সকালে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দুপুরে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁদের বৈঠক আছে। এ জন্য ওই বৈঠকের ফলাফলের আগপর্যন্ত ‘রেল ব্লকেড’ কর্মসূচি শিথিল থাকবে।
আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক থাকায় শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) দুপুর পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ে ছিলেন না। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব খ ম কবিরুল ইসলামও ঢাকার বাইরে ছিলেন। এ অবস্থায় অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি অনুবিভাগ) রেহানা ইয়াছমিনের সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল। দুপুর ১২টার দিকে বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় বেলা ৩টার দিকে।
বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীদের একজন প্রতিনিধি মাসফিক ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, শিক্ষা উপদেষ্টাসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বৈঠক করানো হবে। কিন্তু তাঁরা কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে এসে উপস্থিত হয়ে দেখেন শিক্ষা উপদেষ্টা তাঁদের মধ্যে উপস্থিত হননি। সচিব যেহেতু রংপুরে, তিনিও উপস্থিত হতে পারেননি। যাঁরা সংশ্লিষ্ট তাঁদের সঙ্গে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কোনো ‘পেপার ওয়ার্ক’ দেখাতে পারেননি। তাঁরা যে পদক্ষেপ নিচ্ছেন, সেটার কোনো প্রমাণাদি নেই। তাঁরা বলেছেন, নিয়োগবিধি সংশোধন করেছেন। কিন্তু তাঁরা কোনো দৃশ্যমান ফলাফল পাচ্ছেন না। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।
মাসফিক ইসলাম বলেন, বৈঠকে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন কোনোভাবেই সন্তুষ্ট নয়। তাঁরা ডেকে কোনো সমাধান দিতে পারেননি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সারা বাংলাদেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সম্মিলিতভাবে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন একত্রিতভাবে সিদ্ধান্তক্রমে কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবে।
এরপর সন্ধ্যায় মশালমিছিল কর্মসূচির আহ্বান করা হয়।
রাতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন প্রথম আলোকে বলেন, সারা দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা শুক্রবার বাদ জুমা একযোগে “৮৭ এর কাফন আন্দোলন”– এর মতো মাথায় কাফন বেঁধে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করবে।
ছয় দফা দাবি
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে প্রথমটি হলো জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতি কোটা বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির রায় বাতিল, ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত, ২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।