রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে আগুনে হতাহতের ঘটনায় চোখে কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী। আজ সোমবার আগুনে পুড়ে যাওয়া ভবনের সামনে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন শান্তিনগর, সিদ্ধেশ্বরী ও বেইলি রোড এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা এ সময় সেখানে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে এলাকাবাসীর হাতে বিভিন্ন দাবিসংবলিত পোস্টার দেখা যায়। তাতে লেখা ছিল—‘এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড’, ‘কত মানুষ মরলে শহর নিরাপদ হবে’, ‘আশপাশের রেস্তোরাঁবোঝাই ভবনগুলো কি নিয়ম মেনে হয়েছে?’ প্রভৃতি।
মানববন্ধনে ভবনগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বাণিজ্যিক ভবনগুলোর অনুমতি ও ছাড়পত্র পরীক্ষা করে দেখার দাবি জানান বক্তারা। এ সময় মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তার দাবিও জানান তাঁরা। মানববন্ধন শেষে ফুল দিয়ে আগুনে প্রাণ হারানো মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
মানববন্ধনের সভাপতিত্ব করেন বেইলি রোডের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশিদা কুদ্দুস। তিনি বলেন, ‘সবাই মিলে যে দেশ স্বাধীন করলাম, সেই স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি? আমাদের বাক্স্বাধীনতাও নেই। এখানে একজন পুলিশ ভাই বলছিলেন, “আপনারা মাইক ব্যবহার করবেন না।” এখানে আমরা রাজনীতি করতে আসিনি, প্রতিবাদ করতে এসেছি।’
আগুন লাগা ভবনটিতে যাঁরা রেস্তোরাঁ খোলার অনুমতি দিয়েছেন, তাঁদের শাস্তি দাবি করে রাশিদা কুদ্দুস বলেন, ‘এই ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল অফিসের জন্য। ভবনটি রেস্তোরাঁয় পরিণত হয়েছে। কাদের প্ররোচনায় হলো, কারা অনুমতি দিল? অনুমতি যারা দিয়েছে, তাদের আমরা স্বচক্ষে দেখতে চাই। সরকার তাদের গ্রেপ্তার করুক।’
বেইলি রোডে আগুন লাগা ভবনের পাশের ভবনের বাসিন্দা রঞ্জনা দেবী বলেন, ‘আমি ট্রমায় আছি। এই ঘটনা দেখার পর থেকে (চার দিন) আমার বাসায় রান্না হয় না। এখানে আসার পরে কয়েকজন প্রশ্ন করেছেন যে “আপনার কি কেউ হয়?” এমন প্রশ্নে আমি আহত হই। আমার পাশে, আমার চোখের সামনে মেয়ে মারা যাচ্ছে, বৌদি মারা যাচ্ছে, ভাবি মারা যাচ্ছে। ওরা তো আমাদেরই লোক। ওদের মৃত্যুতে যদি আমার হৃদয় না কাঁদে, তাহলে কি আমরা মানুষ?’
বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে আগুন লাগে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছয়জন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনায় সরকারকে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল্লাহ আল কাফী (রতন)। মানববন্ধনে তিনি বলেন, ‘পরিবারকে সময় দিতে এসে লাশ হয়ে ফিরে গেছেন অনেকে। কিন্তু যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁদের ভ্রুক্ষেপ দেখি না। তাঁদের কোনো মায়া দেখা যায় না। এই সরকার নিষ্ক্রিয়।’
আগুনের এই ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলে মনে করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর জাতীয় পরিষদ সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ। তিনি বলেন, ‘নিয়মকানুন মেনে যদি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠত, তাহলে হয়তো এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। এটাকে আমরা দুর্ঘটনা বলতে পারতাম। আগুনে এত মানুষ মারা গেল, বেইলি রোডের ভবনগুলো কি নিরাপদ হয়েছে? ঝুঁকিগুলো কি নির্মূল করা হয়েছে? যাঁরা এসব অনিয়মের জন্য দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
স্থানীয় বাসিন্দা মঞ্জুর মঈনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাহমিনা সুলতানা, স্থানীয় বাসিন্দা কল্লোল বণিক প্রমুখ।