চাকরি নিয়ে স্নাতকদের দোরগোড়ায় ৪৫ প্রতিষ্ঠান

চাকরি মেলায় জীবনবৃত্তান্ত জমা দিচ্ছেন বিইউবিটির শিক্ষার্থীরাছবি: বিইউবিটির সৌজন্যে

কথায় আছে, যোগ্যতা থাকলে চাকরি আপনাকে খুঁজে নেবে। যোগ্যদের খুঁজতে আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) ক্যাম্পাসে আয়োজিত চাকরি মেলায় অংশ নিয়েছিল ৪৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করেছেন কিংবা দু-এক মাস পরেই স্নাতক শেষ হবে, এমন শিক্ষার্থীরা এসব প্রতিষ্ঠানে পছন্দের চাকরির জন্য আবেদন করতে পেরেছেন।

রাজধানীর মিরপুরে বিইউবিটির ক্যাম্পাসে ‘বিইউবিটি ক্যারিয়ার ফেয়ার ২০২৫’ নামের এই চাকরি মেলার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যারিয়ার গাইডেন্স, কাউন্সেলিং ও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স অফিস। সহযোগিতায় ছিল অনলাইনে চাকরি খোঁজার প্রতিষ্ঠান বিডিজবস ডটকম লিমিটেড।

বিইউবিটি এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো চাকরি মেলার আয়োজন করল। এবারের এক দিনের এই আয়োজনে অংশ নেয় ব্যাংক, তথ্যপ্রযুক্তি, বিপণন, উৎপাদন ও সেবা খাতসহ বিভিন্ন খাতের প্রতিষ্ঠান।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চাকরি পেতে শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্যই এই উদ্যোগ। বিগত বছরগুলোতে চাকরির মেলা এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০০ স্নাতক চাকরি পেয়েছেন।

মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন বিইউবিটির উপাচার্য এ বি এম শওকত আলী
ছবি: বিইউবিটির সৌজন্যে

বিইউবিটির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা ফেরদৌস গিয়েছিলেন চাকরি মেলায়। তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ার ফেয়ার বিইউবিটি শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত আয়োজন। আগের মেলাগুলা থেকে অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জায়গা করে নিতে পেরেছেন। আমিও জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছি। আশা করছি ভালো কিছু হবে।’

অনেক শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার খরচ নিজেকে বহন করতে হয়। পড়াশোনা চলাকালে সুবিধামতো খণ্ডকালীন চাকরি পাওয়াও কঠিন। তাঁদের কথা মাথায় রেখে চাকরির মেলায় রাখা হয়েছে শিক্ষার্থীদের টিউশন পেতে সহযোগিতা করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান।

মাহমুদুল হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের খরচ বহন করতে টিউশনি (অন্য শিক্ষার্থীকে পড়িয়ে আয়) করতে চান। কিন্তু তেমন কারও কাছে সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো নিয়মিত শিক্ষার্থী। টিউশনির জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছি। আশা করছি, ইতিবাচক সাড়া পাব।’

আয়োজকেরা মনে করেন, শুধু চাকরির বাজারে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ সহজ করাই নয়, চাকরির বাজার এবং এর চাহিদা সম্পর্কে জানতে এ মেলা সহায়তা করবে। পাশাপাশি যে শিক্ষার্থীরা স্নাতক শেষে ইন্টার্নশিপ (শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করা) করতে চান, তাঁদের জন্যও বাড়তি সুযোগ তৈরি করবে এই আয়োজন।

মেলায় চাকরি প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করে রহিমআফরোজ বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাকরিপ্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করছি। দক্ষতা অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে তাঁদের ডাকা হবে। যাঁরা নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবেন, তাঁদের জন্য ভালো সুযোগ অপেক্ষা করছে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিইউবিটির উপাচার্য এ বি এম শওকত আলী। তিনি বলেন, করপোরেট জগতে টিকে থাকতে হলে প্রতিনিয়ত নিজের বিশেষ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। দক্ষতা দিয়েই নামীদামি প্রতিষ্ঠানে জায়গা করে নিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তোলার ওপর জোর দেন বিডিজবসের পরিচালক প্রকাশ রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মাতৃভাষা ও ইংরেজির পাশাপাশি তৃতীয় একটি ভাষা জানা আজকের দিনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’

শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি এবং বৈশ্বিক চাহিদায় শীর্ষে থাকা পেশাগুলোর ওপর দক্ষতা অর্জনে জোর দেন দেশে আইটি প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মনির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ পদই টেকনিক্যাল (কারিগরি)। কিন্তু নিয়োগের ক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী খুঁজে পাওয়া যায় না।’

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিইউবিটির ব্যবসা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সৈয়দ মাসুদ হোসেন। এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিইউবিটির রেজিস্ট্রার মো. হারুন-অর-রশিদ, কোষাধ্যক্ষ আলী আহমেদসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ক্যারিয়ার গাইডেন্স, কাউন্সেলিং ও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স অফিসের উপপরিচালক এ বি এম মেসবাহুল হাসান।

মেলার সমাপনী পর্বে অংশ নিয়ে বিইউবিটি ট্রাস্টের সদস্য এ এফ এম সরওয়ার কামাল বলেন, ক্যারিয়ার ফেয়ার শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ায় সহায়ক। বিইউবিটি সব সময় এ ধরনের উদ্যোগে পাশে থাকবে।