সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ভবনে বিস্ফোরণে তিনজনের মৃত্যুতে কারও ‘অবহেলা’ পায়নি পুলিশ

সায়েন্স ল্যাব এলাকার তিনতলা একটি ভবনে বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হয়েছেন
ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় তিনতলা ভবনে বিস্ফোরণে কারও অবহেলা পায়নি পুলিশ। এ কারণে বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অপমৃত্যু মামলা করেছে। গতকাল সোমবার গভীর রাতে নিউমার্কেট থানায় এই মামলা হয়। তবে নিহতদের স্বজনদের পক্ষ থেকে কোনো মামলা হয়নি।

গত রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার শিরিন ভবনের তৃতীয় তলায়। এতে তিনজন নিহত হন। আহত হন ১৫ জন। এ ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনায় সাধারণত ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগ এনে মামলা হয়। এ ঘটনায় ‘অপমৃত্যু’ মামলার অর্থ হলো, এটি একটি দুর্ঘটনা। এর জন্য কেউ দায়ী নয়।

এর আগে ২০২১ সালের ২৭ জুন মগবাজারে একটি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় ২৮ জুন ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ’ এনে রমনা থানায় মামলা করে পুলিশ। এর আগে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর চুড়িহাট্টা মোড়ের কাছে চারতলা ওয়াহেদ ম্যানশনে বিস্ফোরণে ৭১ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ’ আনা হয়েছিল। এই মামলায় ভবনমালিক দুই ভাইসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দেওয়া হয়েছিল।

শিরিন ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা ‘অপমৃত্যু’ মামলার বিষয়ে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল গণি প্রথম আলোকে বলেন, এই বিস্ফোরণের ঘটনায় কারও অবহেলা আছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটা অবহেলার কারণে ঘটতে পারে, এসি থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, মিথেন গ্যাস জমে বিস্ফোরণ হতে পারে। তবে কোনোটিই নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কী ঘটেছিল, সেটি নিশ্চিত হয়েই মামলা করা ভালো।

বিস্ফোরণের পর ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। বিস্ফোরণের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘জমে থাকা গ্যাস’। কিন্তু কোথা থেকে গ্যাস জমেছিল, সেটি এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

ঘটনার পর পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয় দলের কর্মকর্তারা জানান, জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে সেই গ্যাস কোথা থেকে কীভাবে নির্গত হয়েছে এবং কোথায় সেটা জমেছিল, সেটা এখনো উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের একটি সূত্র জানায়, তাদের অনুসন্ধানে ওই ভবনে মিথেন ও কার্বন মনোক্সাইডের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পুরোনো ও অব্যহৃত গ্যাসের লাইনের ছিদ্র থেকে বা পয়োনালা থেকে শৌচাগারের পাইপ দিয়ে নির্গত গ্যাস কুণ্ডলী হয়ে তৃতীয় তলার কোনো একটা ছোট স্থানে জমা হয়েছিল। আবার শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) থেকেও কার্বন মনোক্সাইড নির্গত হতে পারে। গ্যাসের কুণ্ডলী কোনো ধরনের স্ফুলিঙ্গের (স্পার্কিং) সংস্পর্শে এলে সেটা বিস্ফোরণে রূপ নেয়।