বর্ষবরণে গুলশানে দিনভর উৎসব
কখনো গান, কখনো আবার নাচ। রয়েছে কবিতা আবৃত্তির আসর। গান কিংবা কবিতা শোনার ফাঁকে চলছে বন্ধুদের সঙ্গে জমজমাট গল্প-আড্ডা। বায়োস্কোপ দেখছে শিশু-কিশোরেরা। প্রবীণ ও নবীন শিল্পীরা মিলে রংতুলিতে ক্যানভাস রাঙাচ্ছেন।
দিনভর এমন নানান আয়োজনে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করা হচ্ছে। নাগরিক উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটির সমন্বয় করেছে ফেসবুকভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ‘অলিগলি হালখাতা’।
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে দিনভর এ উদ্যাপনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। শুরুতেই পার্কের ভেতরে লেকপাড়ের ঘাট থেকে নাচ আর বাদ্য বাজিয়ে শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রা শেষ হয় বটতলায়। সেখানে আমন্ত্রিত অতিথিরা বর্ষবরণের সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘উৎসবগুলোকে পাড়ায় পাড়ায় ছড়িয়ে দিতে হবে। কারণ, এখন সবাই ঘরের মধ্যে মোবাইলে ব্যস্ত থাকেন। এখানে কিছুক্ষণের জন্য মোবাইল বাদ দিয়ে যাঁরা সমবেত হতে পেরেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’
মেয়র আরও বলেন, মন থেকে সব আবর্জনা দূর হয়ে যাক। মনের আবর্জনা মুছে ফেলতে পারলে, এই শহরেও ময়লা–আবর্জনা জমবে না। শহর পরিষ্কার রাখব, খাল-মাঠ দখল করব না, এটাই হোক আজকের দিনে সবার প্রতিজ্ঞা।
অলিগলি হালখাতার অমিতি কুন্ডু প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণে তো রমনা বটমূল, চারুকলা কেন্দ্র করে সব সময় পয়লা বৈশাখের আয়োজন হয়। ঢাকা উত্তরে সে অর্থে বাংলা বর্ষবরণের কোনো আয়োজন হয় না। একদিন বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতে দিতে ঠিক করলাম যে এবারে আমরা এদিকেও বর্ষবরণের আয়োজন করব। সে জন্য বর্ষবরণের সঙ্গে মিল রেখে যা যা হতে পারে—গান, বাজনা, নাচ, চিত্রাঙ্কন এসবের আয়োজন করেছি। গুলশান, বনানী ও বারিধারার বাসিন্দারা সবাই মিলে একত্র হয়ে এই আয়োজন করা হচ্ছে।’
সরেজমিন দেখা যায়, পুরো পার্ক নানান নকশায় রঙিন কাগজ দিয়ে সাজানো হয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু স্টলের (দোকান) পাশাপাশি শিশুদের খেলনা ও নারীদের গয়নার দোকানও রয়েছে। একটি স্টলে বায়োস্কোপ রাখা হয়েছে। গানের তালে তালে সেখানে বায়োস্কোপ দেখছে শিশুরা। পার্কের মুক্তমঞ্চ ঘিরে করা হয়েছে অনুষ্ঠানের মূল মঞ্চ। সেখানেই বসবে গান আর কবিতা আবৃত্তির আসর।
অনুষ্ঠানের শুরুতে নাচ পরিবেশন করেন র্যাচেল প্রিয়াংকা প্যারিস। বিকেলে গানপোকা, আনান সিদ্দিকা, ইমরান আহমেদ, এলকেজি কোয়াটেট, ইসলাম উদ্দিন পলাকার ও বাপ্পা মজুমদারের গান পরিবেশন করার কথা রয়েছে। এর আগে গতকাল শনিবার সারা রাত গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বর থেকে সাহাবুদ্দীন পার্ক পর্যন্ত আলপনা আঁকা হয়।
পাঁচ বন্ধু মিলে পার্কে বেড়াতে গিয়েছিলেন বাড্ডার নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা লাবিব হাসান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যাওয়ারও পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। কিন্তু এই পার্কেই পয়লা বৈশাখের আয়োজন দেখে শাহবাগের দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন তাঁরা।
স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে উৎসব উদ্যাপনে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে যান বারিধারার বাসিন্দা ফরহাদ জামিল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন এত দিন শুধু শাহবাগ আর রমনা পার্ককেন্দ্রিক ছিল। এবার থেকে এই উৎসব গুলশানেও হচ্ছে। বাঙালির প্রাণের এই উৎসব শহরের আরও অনেক জায়গায় উদ্যাপন করা উচিত।