এবার ঈদে ঢাকার বায়ুদূষণ কেন বেশি
৮ বছরের মধ্যে এবার দূষণ সবচেয়ে বেশি। দূষণের কারণ কম বৃষ্টি, দূষণের উৎসগুলো নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি।
এবারের ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ঢাকায় যতটা বায়ুদূষণ হয়েছে, তা আট বছরের মধ্যে ছিল সবচেয়ে বেশি। ২০১৬ সাল থেকে সদ্য শেষ হওয়া ঈদুল ফিতরের সময়কার বায়ুদূষণের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ তথ্য দিয়েছে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।
গবেষণায় আট বছরের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন এবং আগে-পরের দুই দিন করে, মোট পাঁচ দিনের বায়ুদূষণের অবস্থা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বায়ুদূষণ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের পর্যবেক্ষণ (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স-একিউআই) থেকেই এ চিত্র তুলে ধরেছে ক্যাপস।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের বায়ুমান গবেষণাকেন্দ্রের হিসাবে, ধুলা ও ধোঁয়া ঢাকার বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ভূমিকা রাখে। এ ধুলার বড় উৎস অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে নির্মাণকাজ, পুরোনো যানবাহনের দূষিত বায়ু। আর ৪০ শতাংশ দূষণের উৎস খড়, কাঠ ও তুষের মতো জৈব বস্তুর ধোঁয়া ও সূক্ষ্ম বস্তুকণা।
একিউআই ইনডেক্সে বায়ুর মান ৫০-এর নিচে থাকলে তাকে বিশুদ্ধ বায়ু বলে ধরা হয়। আর ৫০ থেকে ১০০-এর মধ্যে স্কোর মধ্যম কিংবা গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত। ১০০ থেকে ১৫০ হলে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য তা অস্বাস্থ্যকর। ১৫০ থেকে ২০০ অস্বাস্থ্যকর আর ২০১ থেকে ৩০০ স্কোরকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়। স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ হলে সেই বাতাসকে দুর্যোগপূর্ণ ধরা হয়।
এবারের ঈদে পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই বায়ু ছিল অস্বাস্থ্যকর। এর আগের সাত বছরে ঈদের সময় এটা দেখা যায়নি।
ক্যাপসের হিসাবে দেখা গেছে, এবার ঈদের আগের দুই দিন; অর্থাৎ বৃহস্পতি ও শুক্রবার বায়ুর গড় মান ছিল যথাক্রমে ১৬৬ ও ১৫৯। আর ঈদের দিন শনিবার বায়ুর মান ছিল ১৪৭। পরের দুই দিন; অর্থাৎ রবি ও গতকাল সোমবার বায়ুর মান ছিল ১৩৯ ও ১৫২।
ক্যাপসের চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারের নেতৃত্বে এ গবেষণা হয়। কামরুজ্জমান মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, এবারের ঈদে পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই বায়ু ছিল অস্বাস্থ্যকর। এর আগের সাত বছরে ঈদের সময় এটা দেখা যায়নি।
এবারের ঈদের পাঁচ দিনে দূষণের গড় মান ছিল ১৫৩। গত বছরের ঈদুল ফিতরের পাঁচ দিনে এ মান ছিল ১৩৬। আর ঈদুল আজহায় গড় মান ছিল ৯৬। এর আগের কোনো ঈদে গড় মান এবারের মতো এত বেশি ছিল না।
প্রতিবছর দুই ঈদের সময় বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছাড়েন। রাস্তায় যানবাহন চলাচল একেবারে কমে যায়। শিল্পকারখানাও বন্ধ থাকে। তাই দূষণের উৎসগুলো প্রায় বন্ধ থাকায় বায়ুর মানও ভালো হয়। কিন্তু এ বছর বায়ুর মানের এই অবনতি কেন? এর উত্তরে কামরুজ্জামান মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, গত সাত বছরই ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় ছিল মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাস। ওই সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। বায়ুদূষণের পরিমাণ কমে আসার অন্যতম কারণ এটি। অন্যদিকে এই সময় ঢাকার আশপাশের বৈধ এবং অবৈধ বেশির ভাগ ইটভাটা বন্ধ থাকে। তবে এবার ইটভাটাগুলোর সব বন্ধ হয়নি। আর ঈদ হয়েছে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে। সামান্য বৃষ্টি হলেও কয়েক দিনের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে তা ততটা প্রভাব ফেলতে পারেনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, এবার ৩ এপ্রিল থেকে বৃষ্টিহীন ছিল ঢাকা। এর ১৯ দিন পর শুক্রবার রাজধানীতে সামান্য বৃষ্টি হয়। পরের দিনও বৃষ্টি হয়, তবে তা মাত্র এক মিলিমিটার।
ক্যাপসের আগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকায় চলতি জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দিন দুর্যোগপূর্ণ বায়ুর মধ্যে কাটিয়েছেন নগরবাসী। এ মাসে মোট ৯ দিন রাজধানীর বায়ুর মান দুর্যোগপূর্ণ ছিল, যা সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ঈদের মধ্যে এবারের বায়ুদূষণ নিয়ে ক্যাপসের তথ্যে একমত পোষণ করে নগরবিদ ও পরিবেশকর্মী ইকবাল হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় নির্মাণকাজে অব্যবস্থাপনা, ফিটনেসবিহীন গাড়ির দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়নি। দুই সিটির বর্জ্যও ছড়াচ্ছে যত্রতত্রভাবে। তবে এসব দূষণ রোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপই চোখে পড়ছে না। পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, তাই ঈদের ছুটিতেও দূষণ বন্ধ হচ্ছে না।