সড়ক দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত সমাজের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের বিচার হয় না: উপদেষ্টা নাহিদ

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামছবি: বাসস (ফাইল ছবি)

অন্তবর্তী সরকারের তথ্য, সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সমাজের উচ্চপর্যায়ের কেউ দুর্ঘটনায় জড়িত থাকলে বিচার হয় না—এমন ধারণা তৈরি হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার ভোরে রাজধানীর পূর্বাচলে বেপোরায়া গতির প্রাইভেট কারের ধাক্কায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক শিক্ষার্থী নিহত হন। ওই প্রাইভেট কার চালাচ্ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তার সন্তান।

উপদেষ্টা নাহিদ এই ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ‘বুয়েটের একজন মারা গেল। একটা ধারণা যে সমাজের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যাঁরা আছেন, তাঁদের বিচার হয় না, জবাবদিহি হয় না। এখানে সাধারণ মানুষদের জীবনটাই আসলে যায়। এই চিত্র আমাদের সমাজে আছে। এটার পরিবর্তন দরকার।

‘সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত সংস্কার’ শীর্ষক ‘জাতীয় সংলাপ’–এ নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন। আজ শনিবার রাজধানীর সার্কিট হাউস–সংলগ্ন প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশে এ অনুষ্ঠান হয়। এর আয়োজন করে বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। দিনব্যাপী এই সংলাপে সড়ককেন্দ্রিক বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও পরিবহন সেক্টরের অংশীদারজন তাঁদের মতামত ও বক্তব্য তুলে ধরবেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, সবাইক বিচারের আওতায় আনা দরকার। এখানে কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। উন্নয়নের নীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে।

পরিবহন খাতে দুর্নীতি চলমান আছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আগের দল দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল, আবার এখন আরেক দল রয়েছে। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা প্রয়োজন। কারণ, রাজনৈতিক কর্মীরাই এগুলোয় জড়িত।

পরিবহন খাতের সমস্যা বহুমুখী বলে মনে করেন উপদেষ্টা নাহিদ। তিনি বলেন, ‘এখানে দুর্নীতির সমস্যা রয়েছে। রাজনৈতিকীকরণের সমস্যা রয়েছে। শিক্ষা ও জনসচেতনতার সমস্যা রয়েছে। আমাদের অদক্ষতা ও নিয়মনীতি না মানার বাস্তবতা আছে। এখানে বহুমাত্রিক সমস্যা, তাই এটার সমাধানও চ্যালেঞ্জের। সব অংশীদারজনকে একত্রে আনতে হবে। এখানে রাজনৈতিক চাপ থাকবে। এখানে একটা সুবিধাভোগী গোষ্ঠী জড়িত।’

নাহিদ বলেন, ‘২০১৮ সালের কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ছিল আমাদের জন্য মূল ভিত্তি। সে সময় স্কুল–কলেজের দুজন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে এই আন্দোলন শুরু হয়।’

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘মানুষের দীর্ঘদিনের একটা ক্ষোভ ছিল। নিরাপদ সড়ক না থাকায় মানুষের ভোগান্তি ছিল। ওই আন্দোলন সে সময় সহিংসভাবে দমনের চেষ্টা করে সেই সময়ের সরকার। বিগত ১৫ থেকে ১৬ বছর আমরা উন্নয়নের একটা গল্প শুনেছি। ব্যপক উন্নয়ন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের একটা ন্যারেটিভ। সরকার উন্নয়ন করছে। আমরাও দেখতে পেয়েছি অনেক রাস্তাঘাট, মহাসড়ক, সেতু হয়েছে।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, এত উন্নয়ন হওয়া সত্ত্বেও কিন্তু নিরাপদ সড়ক নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। তার মানে এই উন্নয়ন জনকল্যাণমূলক হয়নি। এই উন্নয়নের সঙ্গে মানুষের নিরাপত্তা ও সুযোগ–সুবিধা যোগ হয়নি। এগুলো কাঠামোগত উন্নয়ন দেখানো হচ্ছ। সেসব উন্নয়ন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপদ সড়কের সম্পর্ক ছিল না।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ননীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত উন্নয়ন করতে হবে।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন বলেন, বিআরটিএ ও পুলিশ সড়কে শৃঙ্খলা আনতে হিমশিম খাচ্ছে। কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। ফুটপাত দখলমুক্ত করার পরই আবার দখল হয়ে যাচ্ছে।

মো. ইয়াসীন আরও বলেন, রাস্তায় কোনো পুরোনো গাড়ি থাকবে না। বিআরটিএর সব ম্যাজিস্ট্রেট আজ রাস্তায় রয়েছে। কালো ধোঁয়ামুক্ত গাড়ি চলাচলের দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। ইলেকট্রনিক ভেহিকেল হলে ভালো হবে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টার করবে। তারা গাড়ির কালো ধোঁয়ার বিষয়টি দেখবে।

বিআরটির চেয়ারম্যান এরপর এসব আয়োজন সরাসরি স্টেকহোল্ডার বা পরিবহনমালিক বা শ্রমিকদের সঙ্গে করার কথা উল্লেখ করে বলেন, এরপরের আয়োজনটা সায়েদাবাদ করলে ভালো হবে।

জাতীয় সংলাপে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক আরমানা সাবিহা হকসহ অন্যরা।