কুকুর পুষতে গুনতে হয় ৫০০ টাকা

কুকুরপ্রতি বছরে ৫০০ টাকা এবং হরিণ ও ঘোড়ার ক্ষেত্রে ১ হাজার টাকা কর দিতে হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় হরিণ, ঘোড়া ও কুকুর—এই তিন প্রাণী পালন করতে দিতে হয় কর। চলতি অর্থবছরে কর আদায়ের এই উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি।

আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ২০১৬ সাল থেকে কর আদায় করছে। এদিকে পোষা প্রাণীর ওপর কর আদায় নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

সিটি করপোরেশন আদর্শ কর তফসিল, ২০১৬ অনুযায়ী, কুকুরপ্রতি বছরে ৫০০ টাকা কর দিতে হবে সিটি করপোরেশনকে। আর হরিণ ও ঘোড়ার ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা করে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে প্রাণী পোষার ক্ষেত্রে কর আদায় করছে। ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এ সিটিতে ৫টি কুকুর, ১৩টি হরিণ ও ১০টি ঘোড়ার মালিকেরা কর জমা দিয়েছেন। এই ২৮ প্রাণীর জন্য দক্ষিণ সিটি কর আদায় করেছে সাড়ে ২৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান ১৩টি হরিণ পালনের জন্য কর দিয়েছে। এ ছাড়া আরেকটি প্রতিষ্ঠান ৪০টি হরিণ পালনের জন্য শিগগিরই কর পরিশোধ করতে যাচ্ছে বলে সংস্থাটিকে জানিয়েছে।

এদিকে উত্তর সিটি করপোরেশনের মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত উত্তরে প্রায় ২০০টি পোষা কুকুরের নিবন্ধন হয়েছে। তবে কোনো হরিণ বা ঘোড়ার নিবন্ধন হয়নি। তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর নতুন করে প্রায় ৩০টি কুকুর নিবন্ধনের আবেদন জমা হয়। অনেকেই এ নিবন্ধন নবায়ন করছেন।

প্রাণীপ্রেমীরা বলছেন, কর নেওয়া হলে এর বিপরীতে সেবাও নিশ্চিত করতে হবে। তাঁদের অনেকের ভাষ্য, অনেক চা–দোকানি শখ করে কুকুর পালন করেন, তাঁকেও করের আওতায় আনলে পোষা প্রাণী পালনে অনেকে নিরুৎসাহিত হবেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা শাহজাহান আলী প্রথম আলোকে বলেন, এই খাতে কর আদায়ে এখন পর্যন্ত কাউকে বাধ্য করা হচ্ছে না।

দক্ষিণ সিটিতে পোষা প্রাণী কারা লালনপালন করেন এবং সংখ্যা কত, এটি খুঁজে বের করেছে সংস্থাটি। এ জন্য সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের ভেটেরিনারি শাখা থেকে জরিপ চালানো হয়েছে। পাশাপাশি গুলিস্তান এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালেরও সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে।

ওই জরিপে দক্ষিণে ১২৮টি কুকুর, ১৪৫ হরিণ ও ৪৬টি ঘোড়া পালনের তথ্য পাওয়া গেছে। এই তথ্য সংগ্রহের পর সিটি করপোরেশন এসব প্রাণীর মালিকদের কর পরিশোধ করতে চিঠি দিয়েছে।

কর আদায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত দক্ষিণ সিটির দুজন কর্মকর্তা বলেন, হরিণ ও ঘোড়ার কর দিতে তেমন আপত্তি করছেন না মালিকেরা। তবে কুকুরের ক্ষেত্রে মালিকদের বেশ আপত্তি রয়েছে। এই দুই কর্মকর্তা আরও জানান, এই তিন প্রাণীর পাশাপাশি ময়ূরও করের আওতায় আনার ভাবনা চলছে।

পোষা প্রাণীর মালিকেরা কর না দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নে দক্ষিণ সিটির রাজস্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, তফসিলে শাস্তির বিষয়টি সুনির্দিষ্ট নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রাকিবুল হক বলেন, কর আদায়ের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। কর নিতে হলে সিটি করপোরেশনকেও কয়েকটি দায়িত্ব নিতে হবে। যেমন কুকুর হারিয়ে গেলে খুঁজে বের করে দিতে হবে। কুকুরের হাঁটাহাঁটি করার জন্য জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বিনা মূল্যে জলাতঙ্কের টিকা দিতে হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা ফজলে শামসুল কবির বলেন, যাঁরা নিবন্ধন করবেন, তাঁদের প্রাণীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হবে। এ জন্য ইতিমধ্যে পাঁচটি অঞ্চলে ভেটেরিনারি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

উত্তর সিটির কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বলেন, কর দেওয়ার বিপরীতে পোষা প্রাণীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। ঢাকা উত্তর সিটির স্বাস্থ্য বিভাগে যোগাযোগ করলে ভেটেরিনারি চিকিৎসকেরা গিয়ে চিকিৎসা পরামর্শ ও ওষুধপত্র দিয়ে থাকেন।