গুলিস্তানে বাসের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুটিকে ধাক্কা দিল বিআরটিসির দ্বিতল বাস

রাজধানীর গুলিস্তানে দুই বাসের মধ্যে চাপা পড়ে নিহত শিশু সুমনের মা জেবুন নাহার হাসপাতালে আহাজারি করেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর গুলিস্তানে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে দুটি বাসের চাপায় সুমন (৮) নামে এক শিশু মারা গেছে। সে রাস্তায় ও বাসে হেঁটে হেঁটে নামাজ শিক্ষার বই বিক্রি করত।

আজ বিকেল ৪টার দিকে গুলিস্তানের আহাদ পুলিশ বক্সসংলগ্ন সেন্ট্রাল মসজিদের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। রক্তাক্ত অবস্থায় পথচারীরা ওই শিশুকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে চিকিৎসক বিকেল পৌনে ৫টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সুমনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা কমিউনিটি পুলিশের সদস্য মো. বাবু ও বাসশ্রমিক ফয়সাল দেওয়ান জানান, শিশুটি বাসে ফেরি করে নামাজ শিক্ষার বই বিক্রি করত। বিকেলে আহাদ পুলিশ বক্সসংলগ্ন সেন্ট্রাল মসজিদের সামনের রাস্তায় জৈনপুর এক্সপ্রেস নামে একটি বাসের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাস পেছনের দিকে এসে ওই শিশুটিকে জৈনপুর বাসের সঙ্গে চাপা দেয়। এতে গুরুতর আহত হয় ওই শিশু।

পল্টন থানার উপপরিদর্শক এসআই অসিত কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, পথচারীরা আহত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসেন। বাসটি আটক করা গেলেও চালক পালিয়ে গেছেন।

দুর্ঘটনার খবর শুনে হাসপাতালে আসেন সুমনের সৎবাবা আবদুস সামাদ। তিনি বলেন, সুমনের বাবা আলমগীর কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। এরপর সুমনের মায়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।

সুমন তাঁদের সঙ্গে গুলিস্তান স্টেডিয়াম এলাকায় থাকত জানিয়ে সৎবাবা বলেন, ‘ও বাসে হকারি করে নামাজ শিক্ষার বইসহ বিভিন্ন বই বিক্রি করত। আমি নিজেও হকারি করি। বিকেলে খবর পাই, দুই বাসের মাঝে চাপা পড়েছে সুমন। পরে হাসপাতালে এসে ওর মরদেহ পাই।’

ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে সুমনের মা জেবুন নাহার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, সুমনের বাবা দুই বছর আগে লিভার সিরোসিসে মারা গেছেন। পরে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সন্তানহারা এই মা বিলাপ করে বলতে থাকেন, ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব।’

জেবুন নাহার বলেন, ‘আমরা গুলিস্তান স্টেডিয়াম এলাকায় ভাসমান অবস্থায় থাকি। সুমনও আমাদের সঙ্গে থাকত।’