ডেঙ্গুতে এক দিনে রেকর্ড মৃত্যু
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল শুক্রবার সকাল আটটা থেকে আজ শনিবার সকাল আটটা পর্যন্ত) ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর এক দিনে ডেঙ্গুতে এটি সর্বোচ্চ সংখ্যায় মৃত্যু হলো। সাধারণত নভেম্বরে ডেঙ্গু জ্বরে সংক্রমণ কমে যায়। আর সংক্রমণ কমে আসার ফলে কমে যায় মৃত্যুর সংখ্যাও। কিন্তু চলতি মাসের শুরুতেই মৃত্যুর এই ঊর্ধ্বগতি জনস্বাস্থ্যবিদ এবং চিকিৎসকদের ভাবিয়ে তুলেছে। তাঁরা বলছেন, অক্টোবরজুড়ে ডেঙ্গুতে সংক্রমণ বেশি থাকার কারণে এ রোগে আক্রান্ত হওয়া জটিল রোগীদের মৃত্যু হচ্ছে। এখন সংক্রমণ কমাতে যেমন তৎপরতা দরকার, তেমনি দরকার চিকিৎসাব্যবস্থা আরও ঢেলে সাজানো।
আজ শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আজ সকাল আটটা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় সর্বোচ্চ চারজন, বরিশাল বিভাগে তিনজন এবং সিটি করপোরেশন ছাড়া ঢাকা বিভাগ, খুলনা বিভাগ ও ময়মনসিংহ বিভাগে একজন করে মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯৬৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৭২ রোগী ভর্তি হয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হাসপাতালে। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৮০, ঢাকা বিভাগে ১৬৯, বরিশাল বিভাগে ১২৫, খুলনা বিভাগে ৮১, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭১, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪০, রাজশাহী বিভাগে ২১, সিলেট বিভাগের ৫ ও রংপুর বিভাগের হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ বছরের জুলাই থেকে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ওই মাসে ডেঙ্গুতে ২ হাজার ৬৬৯ জন আক্রান্ত হন। পরের মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৫২১। সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩ গুণ বেড়ে হয় ১৮ হাজার ৯৭। গত অক্টোবর মাসে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ৩০ হাজার ৮৭৯ জন। আর সেই মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ১৩৪ জনের।
এ বছর এখন পর্যন্ত ৬৩ হাজার ১৬৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আজ ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু হলো। এটি এক দিনে মৃত্যুর রেকর্ড। ডেঙ্গু এখন বেড়ে যাওয়ার কারণ অক্টোবরের অস্বাভাবিক বৃষ্টি। এই প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি সার্বিক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম মোটেও এগোচ্ছে না। আবার চিকিৎসাব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণেরও কোনো লক্ষ্মণ দেখছি না।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয় গত বছর। তখন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আর মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ৩৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই সময় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন।
নভেম্বরে সাধারণত ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে যায়। কিন্তু এবার এ মাসের শুরু থেকেই সংক্রমণ যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মৃত্যুও। এর কারণ হিসেবে মশার ঘনত্ব বৃদ্ধিকে একটি কারণ বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবীরুল বাশার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গবেষণায় দেখছি, এডিস মশার ঘনত্ব বেশি আছে; কিন্তু এ মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়।’