টুকটুকি, শিকু আর মজার বইয়ে শিশুদের মজা

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার অমর একুশে বইমেলায় শিশুপ্রহরে সিসিমপুরের জনপ্রিয় চরিত্র টুকটুকি, শিকু, ইকরি ও হালুমদের সঙ্গে আনন্দে সময় কাটায় শিশুরাছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

টেলিভিশনে সিসিমপুরের বন্ধু টুকটুকি, শিকু, ইকরি ও হালুমকে দেখে আনন্দ পায় শিশুরা। সেই আনন্দের সঙ্গে থাকে শিক্ষামূলক নানা বার্তাও। থাকে মজার মজার বইও।

খুদে পাঠকদের এই উচ্ছ্বাসের সঙ্গী তাদের মা–বাবার চোখে-মুখেও যেন দেখা গেল তৃপ্তির ছাপ।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার অমর একুশে বইমেলায় শিশুদের জন্য থাকে বিশেষ আয়োজন। এর নাম শিশুপ্রহর। শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের উত্তর প্রান্তে নান্দনিক রূপে সাজানো শিশু চত্বরে আনন্দ ও বিস্ময়কে উপজীব্য করে লেখা রঙিন সব বইয়ের স্টলের পাশাপাশি দেখা মেলে সিসিমপুরের জনপ্রিয় চরিত্র টুকটুকি, শিকু, ইকরি ও হালুমদের। নতুন প্রজন্মকে বই পড়ায় আগ্রহী করতেই বইমেলা কর্তৃপক্ষের এই আয়োজন।

শিশুপ্রহরের পঞ্চম দিনে আজ বেলা ১১টা থেকে শিশুপ্রহরে সন্তানদের নিয়ে আসতে থাকেন মা–বাবারা। শিশুদের কেউ মা–বাবার হাত ধরে বইয়ের স্টলগুলোয় ঘুরে বেড়ায়। শিশুপ্রহরের পাশে ডজন ডজন শিশুতোষ বইয়ের সম্ভার সাজিয়ে বসেছে তাকধুম, বাবুই, সেসামি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ, চিলড্রেনস পাবলিকেশন, শিশু গ্রন্থকুটির, ডাক, সাত ভাই চম্পা, ছোটদের সময় প্রকাশনী, শিশুবেলাসহ বেশ কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। মা–বাবারা শিশুদের নিয়ে এই স্টলগুলোয় ঘুরে ঘুরে বই কেনেন।

ডাক প্রকাশনীর স্টলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী খুদে পাঠক তাশফিয়াকে গভীর মনোযোগে একটি শিশুতোষ বইয়ের পাতায় নিমগ্ন দেখা গেল। বাবার সঙ্গে বইমেলায় এসেছে সে। তাশফিয়া জানাল, তার বই পড়তে ভালো লাগে। বই পড়ে অনেক কিছু শেখা যায়। তাই বাবা তাকে বইমেলায় শিশুপ্রহরে নিয়ে এসেছেন।

একঝাঁক খুদে পাঠক চত্বরের চারপাশ ঘিরে বসে পড়ে সামনের মঞ্চে সিসিমপুরের বন্ধুদের দেখার জন্য। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিসিমপুর কর্তৃপক্ষের একজন ব্যক্তি শিশুদের সামনে আসেন। তার সঙ্গে একে একে কণ্ঠ মিলিয়ে ‘টুকটুকি এসো’, ‘শিকু এসো’, ‘ইকরি এসো’ ও ‘হালুম এসো’ বলে পাখির মতো কিচিরমিচির ধ্বনিতে শিশুপ্রহরকে জীবন্ত করে তোলে শিশুরা। একে একে টুকটুকি, শিকু, ইকরি ও হালুম এসে নেচে-গেয়ে, হাত-পা নেড়ে তাদের পছন্দের বিষয়গুলো খুদে পাঠকদের জানায়। শিশুরা মাতে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে। ভিড় জমে যাওয়ায় কিছু শিশু বাবার কাঁধে চেপে সিসিমপুরের বন্ধুদের শিক্ষামূলক বিনোদন মুগ্ধ চোখে দেখে।

সাত বছর বয়সী স্বর্ণা ও তার দুই বছরের বড় বোন অহনা শিশুপ্রহরে এসেছিল মা–বাবার সঙ্গে। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী স্বর্ণা জানাল, বাবা তাকে একটা ছড়ার বই কিনে দিয়েছেন। সিসিমপুরের বন্ধুদের সামনাসামনি দেখতে পেয়ে তার খুব ভালো লেগেছে। ইকরি ও হালুমকে তার বেশি ভালো লেগেছে। কারণ, ইকরির হাসিটা খুব মিষ্টি আর হালুমের কণ্ঠটা মজার।

স্বর্ণার বাবা রায়হান সজীব একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাদের বাসা মিরপুর ১১ নম্বরে। রায়হান সজীব প্রথম আলোকে বললেন, ‘বাচ্চারা মুঠোফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। পড়াশোনা ছাড়াও সামাজিক হয়ে ওঠার এবং ভালোমন্দের বোধ তৈরি হওয়ার ব্যাপারগুলো ঠিকঠাক বিকশিত হচ্ছে না। তাই তাদের বইমেলার শিশুপ্রহরে নিয়ে আসা। এখানে একদিকে যেমন বইয়ের সঙ্গে শিশুদের পরিচয় হচ্ছে, তেমনি শিক্ষামূলক বিনোদনের ব্যবস্থাও আছে। বিশেষ করে সিসিমপুরের চরিত্রগুলো যেসব ভালো ভালো বিষয়ে মজা করে কথা বলে, শিশুদের মস্তিষ্কে এর একটা সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।’ শুক্রবার মেট্রোরেল চালু থাকলে তাদের যাতায়াতের জন্য ভালো হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শিশুতোষ বই করেছে বড় প্রকাশনীগুলোও

শিশুতোষ বই শুধু কম পরিচিত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই৷ প্রসিদ্ধ ও প্রতিষ্ঠিত বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোও শিশুদের কথা মাথায় রেখে ডজন ডজন বই প্রকাশ করেছে। এসব বইয়ের বেশির ভাগই বিগত বছরগুলোয প্রকাশিত। তবে কোনো কোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবারও বেশ কিছু শিশুতোষ নতুন বই প্রকাশ করেছে।

স্টলে গিয়ে দেখা গেল, কয়েক ডজন শিশুতোষ বইয়ের সম্ভার সাজিয়ে বসেছে পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স লিমিটেড ও প্রসিদ্ধ পাবলিশার্স। শিশু-কিশোর সাহিত্যের ৬০টির বেশি বই রয়েছে প্রথমা প্রকাশনের স্টলে। অন্য বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টলেও কম-বেশি শিশুতোষ বই রয়েছে।