৩৭ দিন পর মেট্রোরেল চালু, নাশকতা ঠেকাতে উদ্যোগ নেবে সরকার
দীর্ঘ ৩৭ দিন বন্ধ থাকার পর ঢাকার জনপ্রিয় গণপরিবহন মেট্রোরেল আবার চালু হলো।
আজ রোববার সকাল ৭টা ১০ মিনিটে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেনটি মতিঝিলের উদ্দেশে ছাড়ে। আর মতিঝিল থেকে প্রথম ট্রেনটি ছাড়ে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে।
চালু হলেও মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে আপাতত মেট্রোরেল থামবে না। এই দুই স্টেশনে আপাতত যাত্রীসেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
প্রথম দিনের ট্রেন চলাচল পরিদর্শন করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
সচিবালয় স্টেশনে এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বলেন, ভাঙচুর ঠেকাতে মেট্রোরেলকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কেপিআইয়ের (কি পয়েন্ট ইন্সটেলশন) মাধ্যমে মেট্রোরেলকে জরুরি সেবা ঘোষণা করা হবে বলে জানান মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, ‘এটা যাতে ভাঙচুর না হয়, সে জন্য এটাকে কেপিআই হিসেবে একটা আপগ্রেট করার চেষ্টা করছি, যাতে এটার নিরাপত্তা বাড়ে। এবং এটাকে একটি এসেনশিয়াল সার্ভিস হিসেবে ডিক্লার করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, যাতে করে কেউ এভাবে সার্ভিসটাকে ব্যাহত করতে না পারে।’
যারা ভাঙচুর বা ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছিল, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন কি না—এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘এখানে যে সমস্যা হয়ে গেছে, যেহেতু এটা গণ-আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিল, এখন প্রাথমিকভাবে সব মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে।’
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, যাঁরা দেশকে পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করেছে, তাঁদের পক্ষে এ ধরনের কাজ তো করা সম্ভব না। এটা দুষ্কৃতকারীদের কাজ। আপনাদের কাছে তাদের ভিডিও আছে, ফুটেজ আছে, আমরা এর জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’
কোটা সংস্কার ঘিরে আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সেদিন বিকেল পাঁচটায় মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পরদিন মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়। ১৭ আগস্ট থেকে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তখন মেট্রোরেল চালু না হওয়ার কারণ ছিল নিম্ন পর্যায়ের কর্মীদের কর্মবিরতি। দাবি পূরণের বিষয়ে আশ্বাসের পর মেট্রোরেলের কর্মচারীরা ২০ আগস্ট থেকে কাজে যোগ দেন।
আজ সকালে চালুর পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আগারগাঁও থেকে মেট্রোরেলে করে সচিবালয় স্টেশনে আসেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের সামনে বিভিন্ন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
উপদেষ্টা বলেন, সবাই জানেন যে, এটা একটা জনপ্রত্যাশার সরকার। তিনি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরই প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, তাঁর প্রথম কাজ হবে মেট্রোরেল চালু করা। সেটাই তাঁরা করেছেন। এখানে বোর্ড পুনর্গঠন করতে হয়েছে। বোর্ডের সভা ছিল, কিছু দাবিদাওয়া ছিল, এগুলো তাঁরা দেখেছেন।
এর আগে ১৭ আগস্ট মেট্রোরেল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল জানিয়ে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘মেট্রোরেলের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য সেটা চালু করা সম্ভব হয়নি। আপনারা জানেন, এটা বড় অন্যায় কাজ করেছে। তিন লাখ যাত্রীকে জিম্মি করে কোনো দাবি আদায়ের চেষ্টা, এটা কোনো শুভ লক্ষণ না।’
দেশে দাবি-দাওয়ার মৌসুম চলছে বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এখন সারা দেশে একটা দাবি-দাওয়ার মৌসুম চলছে। সবাই দাবি-দাওয়া চায়। সবাই চায় বৈষম্য দূর হবে, সবাই চায় বঞ্চনা থেকে তারা মুক্তি পাবেন। ১৬ বছরের বঞ্চনা…তো সরকারের ১৬ দিন হয়েছে, অনন্ত ১৬ মাস সময় দেন। আমরা আস্তে আস্তে এগুলো সবই বিবেচনা করব।’
সব দাবি পূরণ করলের দেশ মূল্যস্ফীতিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, ‘কিন্তু একটা জিনিস মনে রাখতে হবে যে, এসব দাবি-দাওয়ার সাথে একটা আর্থিক সংশ্লিষ্টতা আছে। আপনার সরকারের যদি রাজস্ব না বাড়ে কিংবা অন্যান্য আয় যদি না বাড়ে, তা হলে এটা কোথা থেকে দেবে? এখন যদি টাকা ছেপে আমরা দিতে পারি, তাহলে তো মুদ্রাস্ফীতি হবে। তাহলে তো সাধারণ মানুষের অনেক কষ্ট হবে। সুতরাং এটা অনভিপ্রেত ঘটনা ছিল এবং আমরা চাই ভবিষ্যতে এটা ঘটবে না।’
উপদেষ্টা জানান, আজ বিকেলে জাপানের রাষ্ট্রদূত তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি বলেন, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন কীভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালু করা যায়, সে ব্যাপারে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলাপ হবে। মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বলা হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতি কী হয়েছে, তা মূল্যায়ন করে চালুর বিষয়ে একটা সুনির্দিষ্ট সময়রেখা দিতে।
মেট্রোরেলের অন্য লাইনগুলোর কাজ কবে শুরু হবে—এমন প্রশ্নে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘অন্যান্য লাইনগুলোর কাজ চালুর ব্যাপারে আমরা কাজ করছি।’