ঢাকায় প্রকৃতিভিত্তিক নগরায়ণ গড়ে তুলতে হবে

রাজধানীর প্রেস ইনষ্টিটিউট-পিআইবি মিলনায়তনে ‘জাস্ট আরবান’ শীর্ষক দুই দিনের সম্মেলনের প্রথম দিন মঙ্গলবার তৃতীয় অধিবেশনে উপস্থিত আলোচকেরাছবি: সংগৃহীত

এখানে নদীকেন্দ্রিক নগর ছিল। যেখানে শহরের সঙ্গে শহরের বিভাজন ছিল নদী ও জলাভূমি দিয়ে। প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে এখানে গ্রাম, গঞ্জ, হাট ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ঢাকা শহরের ধনীদের এলাকা গুলশানে ১৯৮৮ সালে বন্যা হওয়ার পর শহর রক্ষা বাঁধের নামে নদীর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। আর শহরটাকে বানানো হয় লুটপাটের জন্য। এই শহরের অধিবাসীরা এর প্রকৃতি থেকে দূরে সরে যায়।

ঢাকা শহরে প্রাণ–প্রকৃতি থেকে নগরবাসীর বিচ্ছিন্নতা নিয়ে এই বিবরণ দিয়েছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। মঙ্গলবার রাজধানীর প্রেস ইনষ্টিটিউট-পিআইবি মিলনায়তনে ‘জাস্ট আরবান’ শীর্ষক দুই দিনের সম্মেলনের প্রথম দিনের তৃতীয় অধিবেশনে এসব কথা বলেন তিনি। ‘প্রকৃতিবান্ধব শহর’ শিরোনামে এই অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফরহাদ মজহার।

ঢাকায় প্রকৃতিভিত্তিক নগরায়ণ করতে হবে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একটি ফ্যাসিস্ট শাসনামলের মধ্যে ছিল। এর জন্য একমাত্র আওয়ামী লীগ একা দায়ী নয়। এর প্রভাব পড়েছে আমাদের শহরে। ঢাকায় একটি সামন্ততান্ত্রিক সমাজের মধ্যে ইটের দালান বানিয়ে শহর তৈরি করেছে। এখানে প্রতিবেশ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে শুধু ইমারত নির্মাণ করা হয়েছে। এই শহর আসলে সস্তা শ্রমের উৎস। তাই এটা আমাদের শহর না, এটা ভাঙতে হবে।’

অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. ইসরাত ইসলাম বলেন, ‘আমরা নগর থেকে শুরু করে তার প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্যের অধিকারকে একসঙ্গে কখনো দেখিনি। শহর হওয়া উচিত অনুর্বর এবং যেখানে প্রকৃতি কম। কিন্তু আমরা উল্টো কাজ করি। ঢাকা উত্তর–দক্ষিণে বড় হওয়ার কথা ছিল। হয়েছে পূর্ব–পশ্চিমে। ওই জমিগুলো ছিল জলাভূমি ও ধানখেত।’

ইসরাত ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখানে আবাসন প্রকল্পগুলো হচ্ছে স্থানীয়দের উচ্ছেদ করে। তিনটি হাউজিং প্রকল্প নিয়ে করা গবেষণায় দেখা গেছে ৬৪ শতাংশ স্থানীয় পুরোপুরি ভূমিহীন হয়ে গেছে। শহরের অর্ধেকের বেশি মানুষ ২০০ বর্গফুটের কম জায়গায় থাকে।’

এই শহরে পড়ালেখা ও কাজের প্রয়োজনে আসা মানুষ একে আপন মনে করেন না বলে মন্তব৵ করেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের ফেলে আসা কোনো কিছু আমরা আর এখানে পাই না।’ গণ–অভ্যুত্থানে যোগ দেওয়া শিক্ষার্থীদের ঢাকা শহরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়ার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘এটা তাদের কাজ না। এটা দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থাকে করতে হবে।’

রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ঢাকাসহ দেশের বড় নদী ও খালগুলো দখল করে আবাসন প্রকল্প আর শিল্পকারখানা হচ্ছে। তারা চারপাশে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে জলাভূমিগুলো স্থায়ীভাবে দখল করছে। এগুলোর বিরুদ্ধে সবাইকে লড়াই করতে হবে।

বানান–এর নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রোমেলের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতির বক্তব্য দেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। আরও বক্তব্য দেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ইফতেখার মাহমুদ, বেসরকারি সংস্থা গ্রিনবার্ড–এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ তাসনিম মাহমুদ।